অর্থনীতি প্রতিবেদক | ক্রাইম এডিশন। ৮ মে ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, সঠিক ও ধারাবাহিক অর্থনৈতিক নীতি অনুসরণ করা গেলে দেশের মূল্যস্ফীতি আগামীতে ৪ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে মূল্যস্ফীতির গতি নিম্নমুখী এবং এই ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে কঠোর আর্থিক নীতি ও নীতিগত স্থিতিশীলতা প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগ আয়োজিত চার দিনব্যাপী নারী উদ্যোক্তা মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর এসব কথা বলেন। এই আয়োজনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নারী উদ্যোক্তাদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
গভর্নর তার বক্তব্যে বলেন, “আমরা লক্ষ্য করছি খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১৪.৫ শতাংশ থেকে নেমে ৮.৫ শতাংশে এসেছে। একইভাবে খাদ্য বহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ১২.৫ শতাংশ থেকে কমে বর্তমানে প্রায় ৯ শতাংশে নেমেছে। এটি আমাদের কঠোর আর্থিক নীতিরই প্রতিফলন।” তিনি আরও বলেন, “যদি আমরা টাকার সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি এবং আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারি, তাহলে মূল্যস্ফীতিকে দীর্ঘমেয়াদে ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা সম্ভব।”
তিনি জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে উচ্চ সুদের হারের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত চাহিদা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে, যাতে মূল্যস্ফীতির চাপ হ্রাস পায়। যদিও এতে বিনিয়োগ কিছুটা ধীর হতে পারে, তবুও অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষায় এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে গভর্নর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “আমরা নারীদের অর্থনীতিতে আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ দেখতে চাই। বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনও আশানুরূপ নয়। নারীরা এখনও মোট ব্যাংক ঋণের মাত্র ৬ শতাংশ পাচ্ছেন, যা অত্যন্ত কম।” তিনি সব বাণিজ্যিক ব্যাংককে নিজস্ব তহবিল থেকে নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানে আরও উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান।
নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে এমন মেলার গুরুত্ব তুলে ধরে গভর্নর বলেন, “এসব মেলার মাধ্যমে নারীরা তাদের উদ্যোগ প্রদর্শনের সুযোগ পান, বাজার সম্প্রসারণ করতে পারেন এবং ব্যাংক ও বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেন।”
মেলায় অংশ নিয়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের ৬৮ জন নারী উদ্যোক্তা। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের পণ্য—হস্তশিল্প, জামদানি, খাদ্যপণ্য, ডিজিটাল সেবা ও প্রসাধনী সামগ্রী প্রদর্শন করছেন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যেই বিদেশে পণ্য রপ্তানির অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
মেলার শেষ দিনে ছয়জন নারী উদ্যোক্তাকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হবে। এ ছাড়া মেলার সময়কালজুড়ে থাকবে ব্যাংক পরামর্শ বুথ, প্রশিক্ষণ কর্মশালা এবং অনলাইন মার্কেটিং বিষয়ক সেশন।
এই অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-গভর্নর, বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, অর্থনীতিবিদ, নারী সংগঠক ও উদ্যোক্তারা। উপস্থিত বক্তারা বলেন, নারীদের অর্থনীতির মূল ধারায় আনতে হলে কেবল মেলা নয়, প্রয়োজন টেকসই সহযোগিতা, সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা এবং ব্যবসা পরিচালনায় প্রযুক্তিগত সহায়তা।
একজন অংশগ্রহণকারী উদ্যোক্তা বলেন, “এই মেলায় অংশ নিতে পেরে আমি খুব খুশি। এখানে এসে অনেক নতুন উদ্যোক্তার সঙ্গে পরিচিত হয়েছি, নতুন কিছু শিখেছি। আশা করি, ব্যাংকগুলো আমাদের কথা আরও গুরুত্ব দিয়ে শুনবে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ ধরনের মেলা শুধু নারীদের পণ্য প্রদর্শনের সুযোগই নয়, বরং তাদের নেটওয়ার্ক ও বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এভাবেই দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আরও সুযোগ সৃষ্টি হলে অর্থনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে এবং সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আরও গতিশীল হবে বলে অভিমত বিশ্লেষকদের।