অনলাইন ডেস্ক | ক্রাইম এডিশন
প্রকাশিত: ১১ মে ২০২৫
সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের অনলাইন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের এক জরুরি বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যেখানে বলা হয়েছে—আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলটির সব কার্যক্রম সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ থাকবে।
এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, দলটি শুধু মাঠে নয়, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও আর কোনো কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। এ নিয়ে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পরবর্তী নির্দেশনা পাওয়ার পর ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, "আমরা উপদেষ্টা পরিষদের পরিপত্র জারির অপেক্ষায় আছি। সেটি প্রকাশের পরই বিটিআরসি মেটা ও অন্যান্য অনলাইন কোম্পানিকে চিঠি পাঠাবে, যাতে দ্রুত পেজগুলো বন্ধের কার্যক্রম শুরু হয়।"
বর্তমানে 'বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ' নামের একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ ফলোয়ার রয়েছে। দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা আসার পর রাতেই ওই পেজ থেকে প্রতিবাদমূলক পোস্ট ও বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। এরপরও পেজটিতে নিয়মিতভাবে নানা ধরনের কনটেন্ট আপলোড হতে দেখা গেছে।
বিটিআরসির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে মেটার বাংলাদেশ অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তারা পরবর্তী নির্দেশনার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে সরকার যদি লিখিত নির্দেশনা পাঠায়, তখনই তারা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।”
এর আগে বিভিন্ন সময়ে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা দেখা গেছে। তবে এই প্রথমবার দলটির বিরুদ্ধে সরাসরি অনলাইন কার্যক্রম নিষিদ্ধের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো।
বিভিন্ন মহলে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে বলছেন, এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বহিঃপ্রকাশ। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি দেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। দলটির মুখপাত্র বলেন, “আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে কোনো দলকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করতে গিয়ে যদি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করা হয়, তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি।”
ফেসবুক পেজ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ইউটিউব চ্যানেল, টুইটার অ্যাকাউন্ট ও নিজস্ব ওয়েবসাইট। এসব মাধ্যমেও দলটি নিয়মিত বিভিন্ন তথ্য ও বার্তা প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির বেশ কয়েকজন নেতার বিচার চলমান রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সরকারের এমন সিদ্ধান্ত অনেককে অবাক করেছে। যদিও সরকার বলছে, এটি কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং বিচার প্রক্রিয়া ও জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, এই ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই পোস্ট দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
পরিস্থিতি এখনো পর্যবেক্ষণে রয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, সরকার তার সিদ্ধান্তে অনড় এবং খুব দ্রুত অনলাইন কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ বাস্তবায়ন শুরু হবে।