নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১২ মে ২০২৫
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আলোচনা শুধুই একটি রাজনৈতিক নাটক—এমন মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি দাবি করেন, বিএনপিকে ঘায়েল করতে এবং একদলীয় রাজনীতির পথ সুগম করতেই এ ধরনের সাজানো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তার মতে, এটি কোনো স্বতঃস্ফূর্ত বা বাস্তব রাজনৈতিক প্রস্তাব নয়, বরং পূর্বপরিকল্পিত একটি ষড়যন্ত্র, যার মাধ্যমে দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে ও জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরাতে নানা ধরণের নাটক সাজিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার মতো আলোচনাও তারই একটি অংশ। এই আলোচনা কেবলমাত্র বিরোধীদলের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে তাদের রাজনৈতিক মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটি নতুন কৌশল। এতে গণতন্ত্রের কোনো উপকার হচ্ছে না, বরং একনায়কতান্ত্রিক প্রবণতা বাড়ছে।
সোমবার (১২ মে) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টুর ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন তিনি। সেখানে দলের অন্যান্য নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বক্তৃতার শুরুতেই তিনি প্রয়াত নেতার স্মৃতিচারণ করে তার অবদান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু ছিলেন দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এবং দলের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম।
মির্জা আব্বাস বলেন, “যারা ১৭ বছর ধরে আমাদের নির্যাতন করেছে, তাদের পুনর্বাসনের কথা বলা হচ্ছে। যারা এসব কথা বলছে, তারা বিএনপির প্রতি ঈর্ষান্বিত। এরা বিএনপিকে দুর্বল করে আবার সেই পুরনো শাসনের দিন ফিরিয়ে আনতে চায়।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান শাসকগোষ্ঠী বিএনপির জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা চায় না বিএনপি আবার শক্তিশালী হয়ে জনগণের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে সামনে আসুক।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, “ভিআইপি ট্রিটমেন্ট নিয়ে তিনি দেশ ছাড়লেন, অথচ সরকার বলছে তারা কিছুই জানে না। এটা কি কোনোভাবে বিশ্বাসযোগ্য?” তিনি একে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বহীনতা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির বিদেশ যাত্রার বিষয়ে রাষ্ট্রের জানা না থাকা সম্ভব নয়। এটি প্রমাণ করে, সরকারের ভেতরে একটি অস্বচ্ছ ও গোপনীয় নেটওয়ার্ক কাজ করছে, যা জনগণের জন্য ভয়ংকর।
বিএনপিপন্থীদের প্রশাসন থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে দাবি করে তিনি আরও বলেন, “দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এমন উপদেষ্টারা আসলে বাংলাদেশি নাগরিকই নন। এতে মনে হচ্ছে দেশে আবারও উপনিবেশিক শাসন কায়েমের চেষ্টা চলছে।” তিনি বলেন, এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং দেশের প্রশাসনকে বিদেশি প্রভাবের কাছে নতজানু করে তুলছে।
মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান নিয়েও সমালোচনা করেন এই বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “বিশ্বের কোনো অভিধানে ‘মানবিক করিডোর’ বলে কিছু নেই। জনগণের মতামত ছাড়াই এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।” তিনি এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক বলে আখ্যা দেন এবং বলেন, এর ফলে দেশের ভৌগোলিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।
এ সময় এনসিপি ও জামায়াতকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, “সেন্টমার্টিন ও সাজেক ইস্যুতে তারা নিশ্চুপ। করিডোর নিয়ে কথা বলছে শুধু বিএনপি। কারণ বিএনপি ছাড়া কেউ জনগণের পক্ষে কথা বলছে না।” তিনি অভিযোগ করেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর নীরবতা প্রমাণ করে যে তারা সরকারের সহযোগী ভূমিকা পালন করছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপিই একমাত্র দল যারা জনগণের স্বার্থে, দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কথা বলছে।
স্মরণসভায় সভাপতিত্ব করেন নাসিরউদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদের আহ্বায়ক সাইদ হাসান মিন্টু। উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ওলামা দলের মাওলানা শাহ মো. নেছারুল হকসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা সবাই প্রয়াত পিন্টুর রাজনৈতিক জীবন ও আদর্শ তুলে ধরেন। বক্তারা তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে দলকে আরও সংগঠিত করার আহ্বান জানান।