ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ১৫ মে ২০২৫
দেশের অন্যতম মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ-এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি এক ভয়াবহ অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠে এসেছে। বিভিন্ন ছায়া-প্রতিষ্ঠানে শত শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেই অর্থ পাচার করার তথ্য মিলেছে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্তে। এসব প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই। এর পেছনে কাজ করেছে একটি প্রভাবশালী চক্র, যার সঙ্গে জড়িত রয়েছে রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারাও।
তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, নগদ বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে ‘ফিনটেক হোল্ডিংস লিমিটেড’ নামক একটি কোম্পানিতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির এমডি জানেন না কোম্পানির প্রকৃত কাজ কী, আর চেয়ারম্যান চিনেন না এমডিকে। এমন অস্পষ্ট ও রহস্যময় প্রতিষ্ঠানে শত কোটি টাকা বিনিয়োগ স্বাভাবিকভাবেই সন্দেহজনক। যদিও অফিস ঠিকানা হিসেবে বনানীর একটি বিল্ডিংয়ের কথা বলা হয়েছে, সেখানে বাস্তবে কোনো কার্যক্রম নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে পাওয়া গেছে, নগদের অ্যাকাউন্ট থেকে ২,৩৫৬ কোটি টাকা গায়েব হয়ে গেছে। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ কোথায় গেল, তার সদুত্তর এখনো মেলেনি। পাশাপাশি, বিনিয়োগের জন্য ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকগুলোরই ব্যবসায়িক বৈধতা নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন।
আরও জানা গেছে, ব্লু ওয়াটার হোল্ডিংস লিমিটেড এবং তাসিয়া হোল্ডিংস লিমিটেড নামের আরও দুটি ছায়া কোম্পানির মাধ্যমে অর্থ পাচারের অভিযোগ উঠেছে। ব্লু ওয়াটারের চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা নাহিম রাজ্জাক। অন্যদিকে, তাসিয়া হোল্ডিংস-এর অফিস পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও ভবনের দারোয়ান জানিয়েছেন, এক সময় সেখানে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনদের যাতায়াত ছিল।
এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন সরকারদলীয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একজন উপ প্রেস সচিব। এসব নাম উঠে এলেও এখন পর্যন্ত কারও বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনিয়মে জড়িত অনেকেই এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের অনিয়ম শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ওপর আস্থাকে ধ্বংস করছে। মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে এমন দুর্বলতা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। কারণ, এখানকার লেনদেনের ওপর নির্ভর করেন দেশের কোটি মানুষ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন প্রশাসন ইতোমধ্যে এসব অনিয়মের অনুসন্ধানে নেমেছে। তবে প্রশ্ন থেকে যায়—এই ভয়াবহ দুর্নীতির বিচার আদৌ হবে কি? যারা এর সঙ্গে জড়িত, তারা কি শাস্তি পাবে? নাকি এটি আরও একটি ধামাচাপা পড়া কেলেঙ্কারির তালিকায় চলে যাবে?
দেশবাসী এখন উত্তর খুঁজছে। সময় এসেছে দোষীদের বিচারের আওতায় এনে জনগণের অর্থ এবং আস্থা—দুটিকেই রক্ষা করার।