ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ১৬ মে ২০২৫
ঢাকার কাকরাইলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ অবস্থান চলাকালে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের মাথার দিকে পানির বোতল নিক্ষেপের ঘটনা বাংলাদেশে একটি গভীর রাজনৈতিক সংকেত দেয়। এতে বোঝা যায়, তাঁর চিন্তা, ভাষা ও অবস্থান অনেকের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটাই প্রশ্ন তোলে—মাহফুজ আলম কি এখন এক নতুন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার?
সম্প্রতি ফেসবুকে তাঁর একটি পোস্ট নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়। হুমকি-ধামকির পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ঢেউ ওঠে। এই ঘটনাগুলো স্পষ্ট করে দেয়, একটি গোষ্ঠী তাঁকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিশানা বানাচ্ছে। আর সেই গোষ্ঠীর পিছনে যে রাজনৈতিক শক্তির ছায়া রয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
মাহফুজ আলমের অন্তর্ভুক্তিমূলক চিন্তা—একটি বৈষম্যহীন সমাজ, একক বাঙালিয়ানার রাজনীতি—এই দেশের কর্পোরেট ও দলকেন্দ্রিক শাসনব্যবস্থার পরিপন্থী। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের মতো একদলীয় শাসন-প্রবণ রাজনৈতিক কাঠামো যেখানে দল ও রাষ্ট্র মিশে গেছে, সেখানে এমন স্বাধীন চিন্তা সহ্য করা কঠিন।
গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ যেভাবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করেছে, বিরোধী দল ও ভিন্নমতকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তাতে মাহফুজ আলমের মতো চিন্তাবিদদের উপর আক্রমণ হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তারা চায়, সবাই নিরব থাকুক—তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় যারা কথা বলবে না, তাদের ঠাঁই নেই।
মাহফুজ আলমের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রাষ্ট্র কাঠামো পুনর্গঠনের প্রশ্ন তুলেছে। তারা সংবিধান পুনর্লিখন, বিচার ব্যবস্থার সংস্কার এবং নির্বাচনের রূপান্তর চায়। এসব দাবি জনগণের কাছে আশাব্যঞ্জক হলেও, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতির জন্য তা ভয়ংকর। কারণ, এতে ধসে পড়বে একদলীয় শাসনের ভিত্তি।
বর্তমানে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার দখলও দলীয়করণের শিকার। যারা এই নিয়ন্ত্রিত বাস্তবতায় ভিন্ন মত পোষণ করে, তারা আজ বিপদের মুখে। মাহফুজ আলম সেই পথেই হাঁটছেন, যেখানে কথা বলা মানেই জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা।
তিনি যেভাবে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার পক্ষে কথা বলেছেন, তা কেউ কেউ কঠোর মনে করলেও বাস্তবতা বলছে, এই দলের কার্যক্রম ইতিমধ্যে গণতন্ত্রের পরিপন্থী। দল হিসেবে তারা শুধু প্রতিপক্ষকে দমন করেনি, বরং রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে একটি গোটা জনগোষ্ঠীকে জিম্মি করেছে।
এই প্রেক্ষাপটে মাহফুজ আলমের অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক দর্শন ও রাষ্ট্র রূপান্তরের ভাবনা এক যুগান্তকারী চেষ্টা হলেও, তা কতটা সফল হবে, তা নির্ভর করছে সাধারণ জনগণের জেগে ওঠার উপর। আজকের আক্রমণ হয়তো একক দৃষ্টান্ত, কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য এটি এক বড় সতর্ক সংকেত।