ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট ।
১৯ মে ২০২৫
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ড গোপালরায় এলাকায় ছাত্রলীগের এক নেতার বিরুদ্ধে একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে ওই নেতা নানা ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারে লিপ্ত রয়েছেন। এসব অভিযোগের মূল হোতা হিসেবে উঠে এসেছে ৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আউয়াল শেখের নাম।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আউয়াল শেখ নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) বয়স কমিয়ে তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে নিজেকে সরকারিভাবে যোগ্য দেখিয়ে গোপালরায় পঞ্চপথি উচ্চ বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ নেন। সাধারণত সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা ও যোগ্যতা প্রয়োজন হলেও, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়মবহির্ভূতভাবে এই পদে বহাল হন।
শুধু তাই নয়, স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, বিদ্যালয়ের মাঠ দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য বন্ধ করে রাখা হয়। মূলত যারা বিএনপি, ছাত্রদল কিংবা যুবদলের রাজনীতির সাথে জড়িত, এমন অনেক যুবককে মাঠে খেলা করতে বাধা দেওয়া হয়। এক শ্রেণির প্রভাবশালী ছাত্রলীগ কর্মী ও তাদের অনুসারীরা মাঠটি দখলে নিয়ে রাজনৈতিক বৈরিতার জেরে বিরোধী মতাবলম্বীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, ছাত্রলীগ নেতারা তাদের সাংগঠনিক পরিচয়ের সুযোগ নিয়ে এলাকায় একধরনের আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করেছে। আউয়াল শেখের বিরুদ্ধে বেশ কিছু নিরীহ যুবককে পুলিশি হয়রানির শিকার করানোর অভিযোগও আছে। ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় থেকে তিনি নিজের প্রভাব বিস্তার করেছেন এবং বিরোধী মতাবলম্বীদের কণ্ঠ রোধে নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও মুখ খুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রলীগ নেতারা প্রশাসনের একাংশকে ব্যবহার করে বিরোধীদের নানাভাবে দমন করছে। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে ঘরছাড়া জীবন যাপন করছেন এবং পরিবার-পরিজন থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন।
গোপালরায় এলাকার সচেতন নাগরিক সমাজ বলছে, একজন ছাত্রলীগ যখন ছাত্র রাজনীতির বদলে ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতির আশ্রয় নেন, তখন সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মাঠ, মসজিদ-মাদ্রাসা কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান—সব ক্ষেত্রেই এই ধরনের নেতিবাচক প্রভাব একটি গোটা প্রজন্মের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
তাঁরা দাবি করছেন, আউয়াল শেখের বিরুদ্ধে দ্রুত নিরপেক্ষ তদন্ত পরিচালনা করে তাঁর চাকরির বৈধতা যাচাই এবং এনআইডি জালিয়াতির তদন্ত করতে হবে। যদি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করাই হবে জনগণের ন্যায়বিচারের দাবি পূরণের পথ।
অন্যদিকে সাধারণ জনগণ প্রশ্ন তুলছেন—কীভাবে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই ধরনের অনৈতিক নিয়োগ ঘটতে পারে? একজন ছাত্রলীগ নেতা কীভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে এনআইডি কার্ড জাল করে সরকারি পদে বহাল থাকতে পারেন? এবং এত অভিযোগ থাকার পরও কেন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন চুপ?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর এখন সময়ের দাবি। গোপালরায়ের সাধারণ মানুষ চান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হোক নিরপেক্ষ, শিক্ষার পরিবেশ হোক মুক্ত এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত। এবং এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার মাধ্যমে প্রশাসন জনগণের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠুক।