নিজস্ব প্রতিবেদক। ক্রাইম এডিশন ডেস্ক।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল উপজেলার নাসিরাবাদ দুলাহার উচ্চবিদ্যালয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের ছাউনি উড়ে যাওয়ায় খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। এতে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা দ্রুত মেরামতের দাবি জানিয়েছেন।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, মোট ১৭২ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত এই প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে দুটি পাকা ভবন ও তিনটি মাটির তৈরি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে মাটির তিনটি ঘরের চারটি কক্ষ এবং পাকা দুটি ভবনের দুটি কক্ষ শ্রেণিকক্ষ হিসেবে ব্যবহার হতো। কিন্তু গত ১৬ মে (শুক্রবার) রাতে হঠাৎ শুরু হওয়া কালবৈশাখী ঝড়ে মাটির তৈরি দুটি ঘরের ছাউনি দুমড়ে-মুচড়ে উড়ে যায়। ফলে সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে পারছে না।
এছাড়া পাকা ভবনের কক্ষগুলোতেও ভারী বৃষ্টির কারণে পানি ঢুকে পড়েছে, যার ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে শিক্ষকরা বাধ্য হয়ে খোলা আকাশের নিচেই শিক্ষার্থীদের পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী নিলা খাতুন বলেন, “আমরা আধুনিক যুগে পড়াশোনা করছি, অথচ এখনো মাটির ঘরে ক্লাস করতে হয়। ঝড়ে আমাদের ক্লাসরুমের টিনের ছাউনি উড়ে যাওয়ার পর রোদ আর গরমে ক্লাস করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। জানি না কত দিন এমন অবস্থায় ক্লাস চলবে।”
একই শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী রিমন আলী জানান, “ঝড়ের পর রোববারও আমরা খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করেছি। এখন যদি বৃষ্টি হয় তাহলে তো পুরো ক্লাসই বন্ধ হয়ে যাবে।”
দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মারুফা খাতুন বলেন, “আমরা বরেন্দ্র এলাকার শিক্ষার্থী, কোনো দিন পাকা ছাদের নিচে ক্লাস করার সুযোগ পাইনি। বৃষ্টির সময় ক্লাস হয় না, গরমে ক্লাস করতে কষ্ট হয়—এর মধ্যেই আমাদের পড়াশোনা করতে হচ্ছে।”
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অখিল চন্দ্র বর্মণ জানান, “১৯৭৩ সাল থেকে মাটির তৈরি ঘরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান চলে আসছে। অন্যান্য বিদ্যালয়ে যেখানে নতুন ভবন নির্মাণ হয়েছে, সেখানে আমাদের বিদ্যালয়টি এখনো জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। দুটি পাকা ভবনের একটি ১৯৯৪ সালে এবং অন্যটি ২০১১ সালে নির্মিত। কিন্তু মাটির তৈরি ঘরগুলো এখন এতটাই নাজুক যে, একটু ঝড়েই সেগুলো ভেঙে পড়ে। এবার দুইটি ঘরের ছাউনি উড়ে গিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দরজা-জানালা, বেঞ্চ, চেয়ার, টেবিল, ফ্যান, এমনকি বিদ্যুৎ মিটার পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো ফান্ড নেই। ফলে সংস্কারের জন্য কোনো ব্যয় বহনের সুযোগও নেই। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য কামনা করছি, যেন দ্রুত মেরামত করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করা যায়।”
এ বিষয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবিনা আনিস বলেন, “বিদ্যালয়ের এমন দুরবস্থা সম্পর্কে আগে জানতাম না। এখনই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলব এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি নতুন ভবন, পর্যাপ্ত আসবাব ও নিরাপদ শ্রেণিকক্ষের অভাবে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে ফেলেছে। দ্রুত সংস্কার না হলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আরও নিচে নেমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অভিভাবকরা।