ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। কালীগঞ্জ, লালমনিরহাট।
তারিখ: ২০ মে ২০২৫
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা এবং রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম তিস্তা নদীর উপর নির্মিত ‘গঙ্গাচড়া (মহিপুর) সেতু’। তবে দীর্ঘদিন ধরে সংযোগ সড়কে স্থাপিত ব্যারিকেডের কারণে এ সেতু দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এরই প্রতিবাদে ও ব্যারিকেড অপসারণের দাবিতে একটি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সোমবার (১৯ মে) দুপুরে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাব কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ‘কাকিনা ইউনিয়ন যাত্রী স্বার্থ সংরক্ষণ কমিটি’। কমিটির আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির বাবু সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
তিনি জানান, গঙ্গাচড়া সেতুটি ২০১৮ সালের এপ্রিলে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। দীর্ঘদিন স্বাভাবিক চলাচলের পর ২০২৩ সালের ২৮ মে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশে সেতুর সংযোগ সড়কে ভারী যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এতে করে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহন চালকদেরকে ৫০ কিলোমিটারের অতিরিক্ত পথ ঘুরে গন্তব্যে যেতে হচ্ছে। এতে জ্বালানি ও সময়ের অপচয়ের পাশাপাশি ভাড়াও বেড়েছে, যা ব্যবসায়ী ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য বাড়তি ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বক্তব্যে তিনি বলেন, “বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মালামাল পরিবহন করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। কাকিনা-মহিপুর রুট দিয়ে ভারী যান চলাচলে বাধা থাকায় বিকল্প পথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার বেশি পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে, যার ফলে ট্রিপ সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং খরচ বাড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “রাস্তাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় এনে সঠিকভাবে সংস্কার ও প্রশস্ত করতে হবে, যাতে বাস ও ট্রাকসহ সবধরনের যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। এটি শুধুমাত্র ব্যবসার সুবিধার্থে নয়, বরং সাধারণ মানুষের যাতায়াতের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকিয়া সুলতানা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, “কাকিনা-মহিপুর সড়কটি স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় রয়েছে। তাই এই সড়ক দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলে অনুমতি নেই। তবে সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
সংবাদ সম্মেলনে কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, স্থানীয় সাংবাদিক ও সুধীজনরা উপস্থিত ছিলেন। তারা সবাই এই ব্যারিকেড অপসারণ ও যান চলাচলের স্বাভাবিকতা ফেরানোর দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন।
এই সেতুটি যদি পুরোপুরি চালু রাখা হয় এবং সংযোগ সড়কটি প্রশস্ত করে ভারী যানবাহনের চলাচল নিশ্চিত করা হয়, তাহলে শুধু রংপুর ও লালমনিরহাট নয়, আশেপাশের আরও কয়েকটি জেলার অর্থনীতি ও পরিবহন খাতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অবশ্য দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দা, ব্যবসায়ী এবং যাত্রী সাধারণ সেতুর ব্যবহার নিয়ে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও অব্যবস্থাপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। তারা বলছেন, সরকার কোটি কোটি টাকা খরচ করে সেতু নির্মাণ করেছে, অথচ ব্যারিকেড বসিয়ে সেটি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে — এটি জনস্বার্থের পরিপন্থী।
এখন দেখার বিষয়, স্থানীয়দের এই দাবির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর বা প্রশাসন কতটা দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং একটি কার্যকর সমাধানের পথে অগ্রসর হয় কি না।