ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ২২ মে ২০২৫
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার তাঁর শপথে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে। ফলে নির্বাচন কমিশনের গেজেট অনুযায়ী ইশরাক হোসেন এখন আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়রের দায়িত্ব পালনের জন্য শপথ নিতে পারেন।
২২ মে, বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া ১১টার দিকে বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রিট আবেদনটি খারিজ করে দেন। এর আগে রিটের শুনানি হয় মঙ্গলবার ও বুধবার দুই দফায়। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবার আদালত এই বিষয়ে চূড়ান্ত আদেশ দেন।
রিট আবেদনটি করেছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একজন বাসিন্দা মো. মামুনুর রশিদ। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কাজী আকবর আলী। রিটে দাবি করা হয়েছিল, ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম যে রায় দিয়ে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছেন, সেটি সংবিধান ও বিদ্যমান আইন পরিপন্থী। এ কারণে নির্বাচন কমিশনের গেজেট অবৈধ ঘোষণা করে শপথ অনুষ্ঠান বন্ধে নির্দেশনার অনুরোধ জানানো হয়।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন। ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। সহকারী হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে এম এহসানুর রহমান ও অ্যাডভোকেট মাকসুদ উল্লাহ।
রিটে শুধু শপথ অনুষ্ঠানে নিষেধাজ্ঞাই নয়, একই সঙ্গে ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও চাওয়া হয়। তবে আদালত রিটকারীর প্রস্তাবগুলোর যৌক্তিকতা মেনে না নিয়ে তা খারিজ করে দেন। ফলে এখন আর কোনো আইনি জটিলতা ছাড়াই মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। সেই নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসের কাছে পরাজিত হন, যার ব্যবধান ছিল প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোট। পরবর্তীতে এই ফলাফল নিয়ে আদালতে আপিল করা হয়।
২০২৫ সালের ২৭ মার্চ, নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়— যেখানে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে তৎকালীন বিজয়ী শেখ ফজলে নূর তাপসের পরিবর্তে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন একটি গেজেট প্রকাশ করে যা তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে। এই গেজেটকে কেন্দ্র করেই রিট আবেদন করা হয়েছিল।
এই রায়ের মাধ্যমে শুধু একটি রাজনৈতিক বিতর্কের অবসানই নয়, বরং দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার ওপর আদালতের আস্থাও প্রতিফলিত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা। ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা এই রায়কে তাদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের বিজয় হিসেবে দেখছেন।
যদিও এখনো শপথ অনুষ্ঠানের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট মহলের আশা, দ্রুতই ইশরাক হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এর মাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসনে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হবে।