ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ২৩ মে ২০২৫
গতকাল থেকে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তীব্র আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগের সম্ভাবনা সামনে আসায় বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের নিয়মিত সভার পর গত বৃহস্পতিবার চার ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন ড. ইউনূস এবং কয়েকজন উপদেষ্টা। বৈঠকে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় এবং ড. ইউনূস পদত্যাগের সংকেত দেন। আগামী শনিবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানা গেছে।
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহবায়ক নাহিদ ইসলাম ড. ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরে প্রকাশ করেন, ড. ইউনূস পদত্যাগের বিষয়ে চিন্তা করছেন। রাজনৈতিক দল বিএনপি ও এনসিপি ছয়জন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে। বিএনপি সদস্যরা খলিলুর রহমান, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়ার পদত্যাগ দাবি করেছে, অন্যদিকে এনসিপি ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ড. সালেহউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি জানিয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান চলমান রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারকে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি সকল রাজনৈতিক পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বার্থে কাজ করার অনুরোধ করেছেন।
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান গত বুধবার এক বক্তব্যে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করানো দরকার। তার এই বক্তব্যের পর দেশের পরিস্থিতি দ্রুত অস্থিরতার দিকে এগোচ্ছে। সেনাপ্রধান উল্লেখ করেছেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য অব্যাহত চাপ দিচ্ছে এবং উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর অনেক ইস্যুতে দেশের অবস্থা আরো সংকটময় হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন আগামী শনিবারের মধ্যে দেশের নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ড. ইউনূস জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যেখানে তিনি তার পদত্যাগের কারণ ও বর্তমান রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেবেন। তবে বৈঠকে অন্যান্য উপদেষ্টারা তাকে একটু ধৈর্য্য ধারণ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এখনই পদত্যাগের মতো গুরুতর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কিছু সময় নেওয়া উচিত।
ড. ইউনূস নিজের বক্তব্যে বলেছেন, তিনি দেশের জন্য একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা সম্ভব হচ্ছে না, এবং তিনি কোনোভাবে ভুল নির্বাচন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে চান না। তাই পদত্যাগের কথা ভাবছেন। তবে কিছু উপদেষ্টা তাকে এই মুহূর্তে পদত্যাগ না করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার অনুরোধ করেছেন, এবং ড. ইউনূস শনিবার পর্যন্ত অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বৈঠকে ড. ইউনূস পরিষদের কিছু সদস্যের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি পরিষদের সদস্যদের সব বিষয়ে জড়িত না হওয়ার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং কিছু ছাত্রনেতাদের কর্মকাণ্ডেও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সেনাপ্রধানের সাম্প্রতিক বক্তব্য দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর এবং বন্দরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচিত সরকারের নেতৃত্ব প্রয়োজন। এছাড়াও তিনি বলছেন, ‘মব ভায়োলেন্স’ রোধে সেনাবাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। সেনাপ্রধানের এই বক্তব্য বিএনপি’র নির্বাচনের দাবি আরো শক্তিশালী করেছে।
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, বিতর্কিত কিছু উপদেষ্টার কারণে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। তাই তাদের অব্যাহতি দেওয়া উচিত। জামায়াতে ইসলামী ও অন্যান্য ইসলামী দলগুলো দেশকে বিভক্ত না করে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
দেশের পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি মিডিয়া নানা ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বিতর্কিত সংবাদ প্রচার করেছে, যা দেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
বিশ্লেষকরা সেনাপ্রধানের বক্তব্যের উপর ভিন্ন মত পোষণ করেছেন। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেনাপ্রধান জাতীয় স্বার্থে কথা বলেছেন, যেখানে নির্বাচন করানো প্রয়োজন। অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এম শহীদুজ্জামান সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে সেনাবাহিনীর নিয়ম লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে সতর্ক করেছেন যে, এটি দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
সর্বোপরি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখন অতিমাত্রায় অস্থির। আগামী শনিবারের ভাষণ এবং তার পরবর্তী পদক্ষেপ দেশ ও দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে চলেছে। জাতির পক্ষে প্রত্যাশা থাকবে শান্তি এবং সমাধানমুখী উদ্যোগ।