সোহেল রানা মাসুদ। ক্রাইম এডিশন। ২৪ মে, ২০২৫
রাজধানী, ঢাকা – চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে শনিবার (২৪ মে) দুপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য তুলে ধরেন। সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট ভাষায় বলেন, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সঙ্গে এনসিপির কোনও রাজনৈতিক বা সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “এই দুইজন উপদেষ্টা গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষিতে সরকারের অন্তর্বর্তী কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করতে। তাঁরা যদি ভবিষ্যতে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে চান কিংবা নির্বাচনে অংশ নিতে চান, তাহলে সরকারে থেকে সেটা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে তাঁদের উচিত হবে সরকার থেকে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র রাজনৈতিক অবস্থান গ্রহণ করা।”
তিনি আরও বলেন, এই দুই ছাত্র উপদেষ্টার নাম ব্যবহার করে এনসিপিকে জড়ানোর প্রচেষ্টা ‘একটি উদ্দেশ্যমূলক অপপ্রচার’, যা তাদের হেয় করার কৌশলমাত্র। এই অপচেষ্টা নিন্দনীয় এবং দলের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।
ইউনূসের নেতৃত্বে রাজনৈতিক সমাধানের প্রত্যাশা
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক সংস্কার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সরকারকে একটি সমন্বিত রোডম্যাপ ঘোষণার আহ্বান জানান। তাঁর ভাষায়, “অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস রাজনৈতিকভাবে সব পক্ষের সঙ্গে সংলাপে এগিয়ে যাবেন বলে আমরা আশা করছি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই জুলাইয়ে একটি ঘোষণাপত্র প্রকাশ করা দরকার, যাতে বিচার সংস্কার ও নির্বাচনের পথনকশা একসঙ্গে উপস্থাপিত হয়।”
তিনি আরও বলেন, একটি স্পষ্ট রোডম্যাপ জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য গঠনে সহায়ক হবে।
নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের সম্ভাবনায় উদ্বেগ
নাহিদ ইসলাম দাবি করেন, বর্তমানে যেভাবে রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে একটি ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন’ অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে অধ্যাপক ইউনূস সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। ইউনূস এমন কোনও নির্বাচনের দায়ভার নিতে রাজি নন বলেও জানানো হয়।
অধ্যাপক ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, “তিনি (ইউনূস) যদি মনে করেন, তাঁকে চাপ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ানো হচ্ছে, তাহলে তা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি গণ-অভ্যুত্থানের পর মানুষের প্রত্যাশা পূরণের জন্যই দায়িত্ব নিয়েছেন। যদি সেই মৌলিক দায়িত্বগুলো পালন না করতে পারেন, তাহলে তাঁর দায়িত্বে থাকা অর্থহীন।”
সেনাবাহিনীর ভূমিকায় সতর্ক মন্তব্য
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, “সেনাবাহিনী দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আছে। তবে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সেনাবাহিনীর কাজ নয়। তাদের কাজ হচ্ছে দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করা।”
৬২৬ জনের তালিকা সেনাবাহিনী প্রকাশ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই তালিকা আরও আগে প্রকাশিত হলে জনমনে বিভ্রান্তি হতো না।
রাজনৈতিক ঐক্যের ডাক
নাহিদ ইসলাম আওয়ামী লীগকে দেশে অনৈক্যের জন্য দায়ী করে বলেন, “বিএনপি সবসময় নির্বাচনের কথা বলেছে। কিন্তু শুধু একটি জাতীয় নির্বাচন নয়, জনগণের স্বার্থে বৃহত্তর ঐক্যই এখন সবচেয়ে প্রয়োজন। আমাদের ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকলেও, দেশের কল্যাণে আমরা আলোচনা করতে প্রস্তুত।”
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে যেসব নির্বাচন হয়েছে, সেগুলোকে আদালতের মাধ্যমে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা দেশের জন্য বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে।
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন
নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নাহিদ বলেন, “বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের আস্থা হারিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। কমিশনকে হয় আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, নতুবা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।”
পাঁচ বছরের ক্যাম্পেইনের সঙ্গে এনসিপির দূরত্ব
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবে – এই ধারণার সঙ্গে এনসিপির কোনও সম্পর্ক নেই। সরকারের কাজের ভিত্তিতে সময় নির্ধারিত হবে। জনগণকে এ বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দিতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “রিলিফ করিডর বা মানবিক করিডরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় যেন কোনও বিভ্রান্তি বা ধোঁয়াশা না থাকে, সে বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ জরুরি।”
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, আরিফুল ইসলাম আদীব এবং দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।