নিজস্ব প্রতিবেদক।
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের একটি গ্রাম—হাজী গফুর মন্ডল পাড়া। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই গ্রামে বসবাস করছেন কয়েকশ মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনো একটি উপযুক্ত রাস্তা নেই তাদের চলাচলের জন্য। বর্ষা মৌসুম তো বটেই, সাধারণ সময়েও এখানে যাতায়াত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। ফলে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সবচেয়ে করুণ বাস্তবতা হচ্ছে, রাস্তাঘাট না থাকার কারণে গ্রামের মেয়েদের বিয়ের সমন্ধও আসে না। পরিবারগুলো ভালো বাসা বা আত্মীয় খুঁজে পেলেও, যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখেই অনেকেই সম্পর্ক থেকে পিছিয়ে যান। ফলে অনেক মেয়ে উপযুক্ত বয়স অতিক্রম করেও বিয়ের সুযোগ পাচ্ছেন না।
স্থানীয় এক বাসিন্দা মর্জিনা জানান, “আমাদের এলাকায় গর্ভবতী মায়েরা খুব কষ্টে থাকেন। হঠাৎ অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স আসার উপায় নেই। এটা শুধু রাস্তার অভাবে হচ্ছে। সরকার যদি একটু নজর দেয়, আমরা অন্তত বাঁচতে পারি।”
একইভাবে শিক্ষার্থী লিমিয়াও বলেন, “আমাদের একটাই চাওয়া—এই রাস্তাটা যেন ভালোভাবে হয়। আমরা ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারি না। বর্ষায় তো অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়।”
স্থানীয় প্রশাসন রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগ নিলেও একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে একাধিক ব্যক্তির জমি সংক্রান্ত বিরোধ। জানা গেছে, ৩১ মার্চ ২০২৫ থেকে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১,১০০ ফিট রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, প্রভাবশালী রফ শেখ ও তার পরিবারের ঘর তুলে রাস্তার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, এটি তাদের নিজস্ব জমি। রফ শেখ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “আমাদের জমির ওপর দিয়ে রাস্তা দেব না। আজ না, কালও না।”
স্থানীয় রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, পুরো গ্রামবাসী রাস্তা চায়। শুধু দুই পরিবারের অরাজি মনোভাবের কারণে থমকে আছে উন্নয়ন কাজ। গোয়ালন্দ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনির খান বলেন, “সবাই রাস্তার পক্ষে। কিন্তু মাত্র দুটো বাড়ির কারণে হাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে আছে।”
এদিকে গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. নাহিদুর রহমান আশ্বাস দিয়েছেন, সমস্যা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে। তিনি বলেন, “স্থানীয় পর্যায়ে জমির বিষয় নিয়ে আপত্তি এসেছে। এটি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বার পর্যায়ের সমাধানের বিষয়। তারা ব্যবস্থা নেবেন।”
এমন বাস্তবতায় এলাকাবাসীর একটাই দাবি—যত দ্রুত সম্ভব রাস্তা নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হোক এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হোক। যেন নারী, শিশু, শিক্ষার্থী এবং অসুস্থদের আর কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়। আর এই রাস্তা তৈরি হলে বিয়ের সমন্ধ ফিরিয়ে দেওয়া কিংবা যোগাযোগজনিত দুর্ভোগের দিন হয়তো একদিন অতীত হয়ে যাবে।
Leave a Reply