ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ২৮ মে, ২০২৫
বাংলাদেশের আকাশে ১৪৪৬ হিজরি সনের জিলহজ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার মাধ্যমে এবার পবিত্র ঈদুল আজহার দিন নির্ধারিত হয়েছে ৭ জুন, ২০২৫ (শনিবার)। বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
সন্ধ্যা ৬টায় ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জানানো হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিষ্কার আকাশে নতুন চাঁদের দেখা পাওয়া গেছে। ফলে ইসলামিক বর্ষপঞ্জি অনুসারে ২৯ মে (বৃহস্পতিবার) থেকে জিলহজ মাস গণনা শুরু হবে এবং ১০ জিলহজ, অর্থাৎ ৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব—ঈদুল আজহা।
ঈদুল আজহা বা কুরবানির ঈদ মুসলিম সমাজের আত্মত্যাগ, ত্যাগ ও ভ্রাতৃত্ববোধের মহিমান্বিত প্রতীক। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আল্লাহর আদেশ মান্য করে প্রিয় সন্তান হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কুরবানি করতে প্রস্তুত হওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করেই মুসলিম বিশ্বে এই উৎসব উদযাপিত হয়।
এদিকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে একদিন আগে ঈদ উদযাপন করা হয়ে থাকে। সৌদি আরবে চাঁদ দেখা যাওয়ায় দেশটিতে ৬ জুন ঈদুল আজহা পালিত হবে। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশ সাধারণত সৌদির পরদিন ঈদ পালন করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতাতেই এবার বাংলাদেশের ঈদ ৭ জুন।
ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি ১০ দিন
পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সরকার ১০ দিনের টানা ছুটি ঘোষণা করেছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী, ঈদের ছুটি শুরু হবে ৫ জুন থেকে এবং চলবে ১৪ জুন পর্যন্ত। এর মধ্যে ঈদের আগের ও পরের কর্মদিবসে নির্বাহী আদেশে অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারি ছুটির তালিকা অনুযায়ী, ৫ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত ঈদের প্রধান ছুটি থাকবে। এরপর ১১ ও ১২ জুন (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) নির্বাহী আদেশে অতিরিক্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ১৩ ও ১৪ জুন যথাক্রমে শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় সাপ্তাহিক ছুটি যুক্ত হয়ে মোট ১০ দিনের বিশ্রাম পাচ্ছেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
এই বছর আগের ঈদ, অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের সময়ও টানা ৯ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল, যেখানে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের ছুটি এবং পরদিন একটি কর্মদিবস বাদে পূর্ণ সপ্তাহব্যাপী ছুটি উপভোগ করেছিলেন সরকারি কর্মীরা।
কোরবানির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময়
চাঁদ দেখার ঘোষণার পর থেকেই দেশজুড়ে কোরবানির প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। গরু, ছাগল ও অন্যান্য কোরবানির পশুর হাটে ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনলাইনে পশু কেনাবেচার প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আগ্রহ বাড়ছে। অনেকেই ইতোমধ্যে হাট ঘুরে পছন্দের পশু দেখে রেখেছেন।
এছাড়া কোরবানির দিনকে কেন্দ্র করে মাংস সংরক্ষণ, বিতরণ, পরিবহন এবং পশু জবাইয়ের স্থান নির্বাচন নিয়েও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যস্ততা দেখা যাচ্ছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য বজায় রেখে কোরবানির কাজ সম্পন্ন করতে নানা নির্দেশনাও দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ধর্মীয় গুরুত্ব ও সামাজিক একতা
ঈদুল আজহার অন্যতম দিক হলো এর সামাজিক ভূমিকা। আত্মীয়-স্বজন, গরিব-দুঃখীর মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করা ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। এতে সমাজে সহানুভূতি ও সমতা গড়ে ওঠে। ঈদের এই মহান বার্তা সমাজে ন্যায়বিচার ও মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় অনন্য ভূমিকা রাখে।