ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ২৯ মে ২০২৫, বৃহস্পতিবার
বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুযোগ-সুবিধা সংশ্লিষ্ট নতুন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সচিবালয়ে সরকারি কর্মচারীরা এক ঘণ্টার প্রতীকী কর্মবিরতি পালন করেন। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত চলা এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের হাজারো কর্মকর্তা-কর্মচারী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫–কে কেন্দ্র করে এই কর্মবিরতির সূচনা। সরকার সম্প্রতি "সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮"–তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনে একটি খসড়া অধ্যাদেশ পাশ করে, যা ইতিমধ্যেই গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে। নতুন এই অধ্যাদেশ কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন সরকারি দফতরে অসন্তোষ দেখা দেয়।
সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে কর্মচারীদের জড়ো হতে দেখা যায়, যেখানে বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার বিষয়ে বক্তৃতা করেন ঐক্য ফোরামসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বাদীউল কবীর বলেন, “এই আন্দোলন কেবল রাজধানীতে সীমাবদ্ধ নয়, দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায় অবস্থিত সরকারি দফতরেও একই ধরনের কর্মসূচি চলছে। আমরা পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই, এই অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
বক্তারা অভিযোগ করেন, নতুন সংশোধনীতে সরকারি কর্মচারীদের অধিকার সংকুচিত করা হয়েছে। চাকরিচ্যুতি ও বিভাগীয় শাস্তির মতো বিষয়ে সংশোধনীতে কিছু কঠোর বিধান রাখা হয়েছে, যা চাকরিজীবীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। সরকারি কর্মজীবীরা মনে করছেন, এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতার পরিবর্তে ভীতি ও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে, যা মাঠপর্যায়ে প্রভাব ফেলবে।
প্রসঙ্গত, ২৩ মে অনুষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে নতুন এই অধ্যাদেশ অনুমোদিত হয়। পরে ২৬ মে সরকারিভাবে তা প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য অনুমতি ছাড়াই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এর বিরুদ্ধেই মূলত কর্মচারীরা একাট্টা হয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
সচিবালয়ের কর্মচারীরা জানান, এই কর্মসূচি একেবারেই শান্তিপূর্ণ এবং প্রতীকী ছিল। তবে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যে, দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি না থাকলে আগামী ৩১ মে’র পর থেকে আরও কঠোর ও লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এতে দেশজুড়ে প্রতিটি প্রশাসনিক দফতরে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতির পাশাপাশি গণঅবস্থান, বিক্ষোভ ও স্মারকলিপি প্রদানের মতো কর্মসূচিও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের অধ্যাদেশের ফলে প্রশাসনের কাজকর্মে স্থবিরতা তৈরি হতে পারে এবং এটি প্রশাসনের স্বাভাবিক ধারার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে নির্বাচনের আগমুহূর্তে এ ধরনের অস্থিরতা সরকারের জন্য রাজনৈতিকভাবে চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।
এদিকে, এ কর্মসূচির ফলে সচিবালয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রমে সাময়িক স্থবিরতা সৃষ্টি হয়। সেবা প্রত্যাশীরা অনেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন। তবে কর্মচারীরা জানান, তারা দেশের প্রশাসনিক সেবা বন্ধ করতে চান না, কিন্তু নিজেদের অধিকার ও নিরাপত্তার বিষয়েও তারা আপসহীন।
অংশগ্রহণকারী এক কর্মচারী বলেন, “আমরা চাই, আমাদের চাকরির নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। আমরা শৃঙ্খলা মানি, কিন্তু অকারণে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া শর্ত মানি না। সরকারের উচিত আমাদের দাবি আমলে নিয়ে আলোচনা করা।”
বর্তমানে আন্দোলন হলেও কর্মচারীরা বারবার তাদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানের কথা পুনরায় উল্লেখ করছেন। দাবি আদায়ে তাঁরা আশাবাদী, তবে প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচিতে যেতেও তাঁরা প্রস্তুত বলে জানান।