ক্রাইম এডিশন ডেস্ক।
বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল আবারও প্রকৃতির ভয়াবহ রূপের মুখোমুখি। কয়েকদিনের টানা ভারী বর্ষণ, অমাবস্যাজনিত উচ্চ জোয়ার এবং বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে অন্তত ১৪টি জেলার হাজার হাজার গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং লাখো মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, মাছের ঘের ও সড়কপথ।
পানির নিচে জনপদ, বিপর্যস্ত জনজীবন
নোয়াখালী, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চাঁদপুর জেলার শত শত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। অনেক জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে, আবার কোথাও উপচে পানি ঢুকে পড়েছে গ্রামে গ্রামে। অনেক বাড়িঘরে কোমরসমান পানি উঠেছে। লোকজনকে ঘরের আসবাব উঠিয়ে সুরক্ষিত জায়গায় রাখতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বাড়িঘরে পানি ঢুকায় রান্নাবান্না বন্ধ হয়ে গেছে অনেক এলাকায়। নলকূপ পানির নিচে চলে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ হয়ে গেছে, বন্ধ হয়ে গেছে দোকানপাট ও হাটবাজার। পানিতে ডুবে গেছে অনেক হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকও।
দ্বীপ ও চরাঞ্চলে সর্বোচ্চ ঝুঁকি
উপকূলের দ্বীপ অঞ্চল — বিশেষ করে নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, হাতিয়া এবং ভোলার মনপুরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এসব এলাকায় বাঁধ উপচে ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি ঢুকেছে। নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূল ভূখণ্ড থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক চরাঞ্চল। খাবার ও পানির সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।
জলাবদ্ধতার পাশাপাশি নদীভাঙনের হুমকি
উচ্চ জোয়ারের সঙ্গে নদীর পানি বাড়ায় বিভিন্ন জায়গায় নদীভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পটুয়াখালী, ভোলা ও সাতক্ষীরায় নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন। অনেকেই ঘরবাড়ি ফেলে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। নদীর তীরবর্তী অনেক এলাকা ইতিমধ্যে ধসে গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আরও দুশ্চিন্তা
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের গভীর নিম্নচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে এগোচ্ছে। এর ফলে আগামী কয়েকদিনও উপকূলীয় অঞ্চলে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। এতে নদ-নদীর পানি আরও বেড়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, ফেনী, গোমতী, তেতুলিয়া ও কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি রয়েছে।
মানবিক সহায়তা প্রয়োজন
বিপদাপন্ন মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। অনেক এলাকায় মানুষ শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের অভাবে ভুগছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কিছু শুকনো খাবার বিতরণ শুরু হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জীবনে যেন নিত্যসঙ্গী। জোয়ার, বৃষ্টি ও নদীভাঙনের ভয় এখন আর নতুন কিছু নয়, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে এসব দুর্যোগ দিন দিন আরও ঘনঘন ও ভয়াবহ হয়ে উঠছে। তাই দীর্ঘমেয়াদে টেকসই বাঁধ নির্মাণ, দুর্যোগ পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্থানীয় মানুষকে সচেতন করে গড়ে তোলা জরুরি।