ক্রাইম এডিশন ডেস্ক। ৩১ মে, ২০২৫
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নতুন সভাপতি হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন দেশের সাবেক অধিনায়ক এবং ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব আমিনুল ইসলাম বুলবুল। শুক্রবার (৩০ মে) তিনি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তবে দায়িত্ব নেওয়ার আগে থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে পড়ে—তিনি নাকি এই দায়িত্ব পালনে মোটা অঙ্কের বেতন নেবেন।
এই গুজবের অবসান ঘটিয়ে বুলবুল তার প্রথম সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দিলেন—বিসিবির সভাপতির দায়িত্ব পালনে তিনি কোনো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন না এবং ভবিষ্যতেও নেবেন না। এই ঘোষণা শুধু একটি বার্তা নয়, বরং এটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের নেতৃত্ব ব্যবস্থায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমি যেখানেই আগে কাজ করেছি, যেমন আইসিসির ডেভেলপমেন্ট উইং—সেখানে নিয়মিত বেতন পেতাম। তবে বিসিবিতে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তারা আমাকে বলেছিল, আমি চাইলে বেতন গ্রহণ করে কাজ করতে পারি। কিন্তু আমি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি—এটা আমার জন্য শুধু একটি চাকরি নয়, এটা একটি দায়িত্ব, একটি সম্মানের চেয়ার। আমি কোনো পারিশ্রমিক নেব না। এটা আমার দেশ, আমার ক্রিকেট, আমার দায়িত্ব।”
আমিনুল ইসলাম বুলবুল আরও বলেন, “বিসিবির সভাপতির পদে আমি এসেছি ‘ক্রিকেট ফর বাংলাদেশ’ নয়, বরং ‘ক্রিকেট ইন বাংলাদেশ’ মিশন নিয়ে। আমি এমন একটি কাঠামো গড়তে চাই, যেখানে দেশের প্রতিটি অঞ্চল, প্রতিটি শ্রেণির মানুষ ক্রিকেটকে নিজের খেলা হিসেবে দেখতে পাবে। আমি একটি ফ্রেমওয়ার্ক মাইন্ড নিয়ে এসেছি। কিছু জিনিস জানি, আরও অনেক কিছু জানতে হবে। কাজ করতে হবে বুঝে-শুনে, পরিকল্পনার মাধ্যমে।”
তিনি বলেন, “সময় খুব বেশি নেই। আমি একে টেস্ট বা ওয়ানডে নয়, একটি গুরুত্বপূর্ণ টি-টোয়েন্টি ইনিংস হিসেবে দেখছি। সংক্ষিপ্ত এই সময়ে আমি এমন কিছু করে যেতে চাই যা দীর্ঘদিন মানুষ মনে রাখবে। আমি চাই, বাংলাদেশে যেন সব বয়সী মানুষ ক্রিকেট খেলতে পারে, এবং খেলাটি যেন সত্যিকার অর্থেই জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠে।”
বুলবুলের এই ঘোষণা দেশের ক্রীড়াঙ্গনে ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছে। দীর্ঘদিন পর এমন একজন নেতৃত্বে এসেছেন যিনি নিজেই আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েছেন। সেই মানুষটি আজ বিনা পারিশ্রমিকে দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়।
বিশ্লেষকদের মতে, একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার ও প্রশাসক যখন নেতৃত্বের দায়িত্ব নেন এবং অর্থের চেয়ে দায়িত্ব ও নিষ্ঠাকে গুরুত্ব দেন, তখন প্রতিষ্ঠানটির জন্য এটি একটি সৌভাগ্যের বিষয় হয়ে ওঠে। বুলবুল তার অভিজ্ঞতা, আন্তর্জাতিক সংযোগ এবং পরিকল্পনামাফিক চিন্তাধারা দিয়ে দেশের ক্রিকেটে নতুন মাত্রা যোগ করতে সক্ষম হবেন বলেই ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিসিবিতে আগে অনেকেই সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ কেউ সফল হয়েছেন, কেউ আবার সমালোচিত। কিন্তু বুলবুল শুরুতেই যে ধরনের নীতিগত অবস্থান নিয়েছেন, তা অনেককেই চমকে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এই অবস্থান দেশের ক্রীড়া ব্যবস্থাপনায় নতুন ধারার সূচনা করতে পারে।
বুলবুলের ভাষ্য মতে, “আমার এই কাজটাকে আমি একটা ‘প্যাশন প্রজেক্ট’ হিসেবে দেখছি। আমি চাই বাংলাদেশের ক্রিকেট যেন শুধু খেলোয়াড় তৈরির প্ল্যাটফর্ম না হয়, বরং একটি সামাজিক আন্দোলন হয়ে উঠুক।”
দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ক্রিকেট অবকাঠামো উন্নয়ন, ঘরোয়া টুর্নামেন্টের মানোন্নয়ন, কোচিং কাঠামো, বয়সভিত্তিক দলগুলো, নারীদের ক্রিকেট, স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে খেলাধুলার প্রসার—সবদিকেই তিনি নজর দিতে চান বলে জানান।
এখন দেখার বিষয়, এই উচ্চ প্রত্যাশা কতটা বাস্তবায়িত হয়। তবে দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা আশাবাদী—বুলবুলের মতো একজন অভিজ্ঞ, পরিশ্রমী এবং দায়বদ্ধ মানুষ যখন নেতৃত্বে থাকেন, তখন সামনে এগিয়ে যাওয়া শুধু সম্ভাবনা নয়, সময়ের ব্যাপার মাত্র।