নিজস্ব প্রতিবেদক।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ এক মোড় ঘুরলো আজ। আপিল বিভাগ এক ঐতিহাসিক রায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল করতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) নির্দেশ দিয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশ রাজনৈতিক মহলে নানা প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
রোববার (১ জুন) সকালে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করে। আদালতের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ২০১৩ সালের পর বাতিল হয়ে যাওয়া জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক স্বীকৃতি ফিরিয়ে আনার পথ উন্মুক্ত হলো।
আদালতের রায়ের প্রেক্ষাপট
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১ আগস্ট এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে দেয়।
এই দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ায় জামায়াত হাল ছাড়েনি। দলটির পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, ব্যারিস্টার ইমরান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট শিশির মনির, ব্যারিস্টার নাজিব মোমেন এবং ব্যারিস্টার মীর আহমেদ বিন কাশেম।
শেষ পর্যন্ত আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায়কে পুনর্বিবেচনা করে নতুন করে ইসিকে নির্দেশ দিলো জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।
‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের ভবিষ্যৎ কী?
দলটির নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়া হলেও তাদের পুরাতন নির্বাচনী প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, প্রতীক সংক্রান্ত বিষয়টি তারা সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের বিধিমালার আলোকে পর্যালোচনা করবে।
জানা গেছে, এ বিষয়ে আগামী কয়েক কার্যদিবসের মধ্যে ইসি একটি আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিতে পারে। তবে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীক ফিরবে কি না।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের প্রতিক্রিয়া
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই রায়ের ফলে দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ফিরে পাওয়ার অর্থ—তারা এখন আবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে, রাজনৈতিক প্রচারণা চালাতে পারবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান জোরদার করার সুযোগ পাবে।
একজন বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “এই রায় রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি দলটির আইনি লড়াইয়ের সাফল্য যেমন, তেমনি দেশের রাজনীতিতে নতুন ধারা সৃষ্টির সম্ভাবনাও তৈরি করেছে।”
জনমতের মিশ্র প্রতিক্রিয়া
সাধারণ জনগণের মধ্যে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, আদালতের রায়কে সম্মান জানাতে হবে, অন্যদিকে কেউ কেউ জামায়াতের অতীত কর্মকাণ্ডের প্রেক্ষিতে তাদের রাজনৈতিক মাঠে ফেরাকে ভালো চোখে দেখছেন না।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনরায় কার্যকর হলে দলটি নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে পারবে। এখন দেখার বিষয়, নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয় এবং রাজনৈতিক অঙ্গনে এই রায়ের প্রভাব কতদূর বিস্তার লাভ করে।
Leave a Reply