ক্রাইম এডিশন ডেস্ক।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ থাইল্যান্ড সফর শেষে দেশে ফিরেছেন। দুই দফায় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকারী এই বর্ষীয়ান রাজনীতিক গতকাল রোববার দিবাগত রাত পৌনে দুইটার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। এরপর রাত তিনটার দিকে তিনি বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।
বিশেষ কোনো রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ছাড়াই সাধারণ যাত্রীর মতোই দেশে প্রবেশ করেন তিনি। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, উড়োজাহাজ থেকে নামার সময় তাঁকে হুইলচেয়ারে করে আনা হয়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন তাঁর ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদ এবং শ্যালক ডা. নওশাদ খান।
এ বিষয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এস এম রাগীব সামাদ জানান, “সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ভিআইপি সুবিধা ছাড়াই সাধারণ যাত্রীর মতো দেশে এসেছেন।”
এর আগে, ৭ মে দিবাগত রাতে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশ ছেড়ে যান। তাঁর বিদেশযাত্রা ঘিরে ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে একটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলার পরও কীভাবে তিনি দেশ ত্যাগ করলেন—তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয় এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।
মামলার পটভূমি
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত একটি মামলায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাঁর বোন শেখ রেহানা, পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। অভিযোগে বলা হয়েছে, ছাত্র আন্দোলনে হামলা ও গুলির ঘটনায় তাঁদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা রয়েছে।
এই মামলা দায়েরের পর আবদুল হামিদের হঠাৎ দেশত্যাগ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহলে বিস্ময়ের সৃষ্টি করে। এ ঘটনায় বিমানবন্দরে দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিশোরগঞ্জের তৎকালীন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরীকে প্রত্যাহার করা হয়। একইসঙ্গে, হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন বিভাগে কর্মরত একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ আরও দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
তদন্ত কমিটি গঠন
আবদুল হামিদের বিদেশ যাত্রা কীভাবে সম্ভব হলো—তা তদন্তে সরকারের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের উপদেষ্টা সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা স্পষ্ট ভাষায় জানান, “যাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁরা কেউই দায় এড়াতে পারবেন না। যথাযথ তদন্ত শেষে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।”
দেশে ফেরার তাৎপর্য
মো. আবদুল হামিদের দেশে ফেরাকে ঘিরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে মামলা থাকা অবস্থায় বিদেশ যাত্রা ও ফেরত আসা—দুটি ঘটনাই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
দেশে ফিরলেও এখনও স্পষ্ট নয়, তাঁর বিরুদ্ধে চলমান মামলার প্রক্রিয়া কীভাবে অগ্রসর হবে এবং তিনি আদালতে হাজির হবেন কি না। আইনজ্ঞরা বলছেন, মামলার আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়া একজন নাগরিকের দায়িত্ব, তা তিনি যেকোনো অবস্থানেই থাকুন না কেন।
জনমত ও ভবিষ্যতের দিক
এ ঘটনার পর দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দায়মুক্তি দেওয়ার সংস্কৃতি রাষ্ট্রীয় ন্যায়বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ক্ষুণ্ন করতে পারে। আবার কেউ কেউ বলছেন, তাঁর দেশে ফেরা আদালতের মুখোমুখি হওয়ার একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।
বর্তমানে দেশজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত। এমন একটি সময়ে সাবেক রাষ্ট্রপতির দেশে ফেরা আগামীর রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
Leave a Reply