সোহেল রানা মাসুদ। ক্রাইম এডিশন।
ঈদুল আযহার ছুটি শেষে রাজধানী ঢাকায় ফিরতে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে আগত লাখো মানুষ আজ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
বিশেষ করে রংপুর থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ হয়ে টাঙ্গাইলের চন্দ্রা পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজট, যা অনেক স্থানে দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে।
আজ ১৩ জুন, শুক্রবার। বেসরকারি অফিস-গার্মেন্টস শিল্প শনিবার খোলা শুরু হবে। তাই আজ ঢাকামুখী মানুষের চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ।
যানজটের প্রকৃতি ও অবস্থান
এই যানজটের সবচেয়ে বড় কেন্দ্রবিন্দু হলো যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল হয়ে চন্দ্রা পর্যন্ত রাস্তার অংশ। সেখানে প্রচুর সংখ্যক গাড়ি একের পর এক আটকে পড়েছে।
গাড়ির ধীরগতি ও থমথমে রাস্তায় প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে যানচলাচল। এই যানজটের কারণ হিসেবে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ, যথাযথ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং রাস্তাঘাটের পর্যাপ্ত ছায়া না থাকা উল্লেখ করা হচ্ছে।
গরমের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্ভোগ
জনগণের অভিযোগ, যানজটের পাশাপাশি তীব্র গরম মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
এক যাত্রী বললেন,
“বাসের ভেতর তেমন বাতাস নেই, জানালা খুলে দিলেও গরমে বাঁচা যায় না। অনেকেই রাস্তায় নেমে হাঁটছে কারণ বাসে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না।”
তীব্র রোদের কারণে শিশুরা কাঁপছে, বয়স্করা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
পানির সঙ্কটও দেখা দিয়েছে অনেক গাড়ির ভেতরে, ফলে যাত্রীদের কষ্ট দ্বিগুণ হয়েছে। বিশেষ করে যমুনা সেতুর পারাপারের সময় এই দুর্ভোগ বেশি চোখে পড়ে।
সেনাবাহিনীর অনুপস্থিতি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন
সাধারণ মানুষের কাছে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে এত বিশৃঙ্খলা, সেখানে কেন সেনাবাহিনীর কোনো কার্যকর উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে না।
রংপুর এলাকায় দুইজন সেনা সদস্য দেখা গেলেও যমুনা সেতুর পূর্ব পাশে এবং চন্দ্রা পর্যন্ত সেনাবাহিনী উপস্থিতি অনুপস্থিত।
এক যাত্রী জানান,
“সেনাবাহিনী থাকলে হয়তো এই ভয়াবহ যানজট ও বিশৃঙ্খলা কমে আসতো, কিন্তু এখানে কোথাও দেখা যায়নি।”
পুলিশের কার্যক্রম ও জনগণের আস্থা
কিছু কিছু স্থানে ট্রাফিক পুলিশ দেখা গেলেও তারা কার্যত নিষ্ক্রিয় অবস্থায় ছিলেন।
হাটিকুমরুল, নলকা, কামারখন্দ ও চন্দ্রা মোড়ে মাঝেমধ্যে পুলিশ থাকলেও যানজট নিয়ন্ত্রণে তাদের কোনো কার্যকর ভূমিকা ছিল না।
যাত্রীদের অভিযোগ,
“পুলিশ শুধু পর্যবেক্ষণ করছিল, কিন্তু কাউকে দিকনির্দেশ বা যানজট মুক্ত করার কোনো পদক্ষেপ দেখানো হয়নি। এখন জনগণের মধ্যে পুলিশের ওপর আস্থা অনেক কমে গেছে।”
যাত্রীদের কষ্টের বর্ণনা
অনেক যাত্রী বাসে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার ফলে ক্লান্ত ও হতাশ।
এক পরিবার বলল,
“আমাদের সঙ্গে তিনজন শিশু রয়েছে, গরম আর অপেক্ষায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এই দুর্ভোগ আরও কমানোর জন্য প্রশাসনের তৎপরতা জরুরি।”
আরেক যাত্রী জানান,
“বাসে এমন গরম যে, অনেকেই টিকিট থাকলেও বাসে উঠতে চাইছে না, ভিড়ের মধ্যে অনেকেই রাস্তার ধারে বসে পড়ে আছেন।”
প্রশাসনের প্রতি দাবিসমূহ
যাত্রী ও স্থানীয়রা দাবি করেছেন,
যানজটপ্রবণ এলাকায় বিশেষ করে যমুনা সেতুর পূর্ব পাশে ও চন্দ্রা মোড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করতে হবে।
বিকল্প রুট ব্যবস্থাপনা দ্রুত চালু করতে হবে।
রাস্তায় ছায়ার জন্য গাছ লাগানো ও পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আধুনিক ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ও ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন।
ঈদের আনন্দের ছুটির পর এই ভোগান্তি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আর বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
Leave a Reply