ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার বিশ্বব্যাপী পালিত হয় ‘বিশ্ব বাবা দিবস’। ২০২৫ সালের এই বিশেষ দিনটি অনুষ্ঠিত হবে ১৫ জুন। এই দিবসটি বাবাদের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা এবং তাদের জীবনের ত্যাগ ও পরিশ্রম স্মরণে উৎসর্গীকৃত। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন আয়োজন ও কার্যক্রমের মাধ্যমে বাবাদের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়।
বিশ্ব বাবা দিবসের উত্পত্তি ও ইতিহাস
বিশ্ব বাবা দিবসের শুরু হয় ১৯১০ সালে আমেরিকার ওয়াশিংটন রাজ্যের স্পোকেন শহরে। সোনোরা স্মার্ট ডাক নামের এক মেয়ে তার একক বাবাকে সম্মান জানাতে এই দিবসের সূচনা করেন। তার বাবা এককভাবে ছয় সন্তানকে লালন-পালন করেছিলেন। সোনোরার বাবার জীবনের সংগ্রাম ও ত্যাগ ছিল এই দিবসের মূল অনুপ্রেরণা। ১৯৬৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন জনসন সরকারিভাবে বাবা দিবসকে স্বীকৃতি দেন এবং এর পর থেকে এটি বিশ্বজুড়ে পিতৃত্বের প্রতি সম্মান জানানোর একটি প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাবাদের গুরুত্ব ও সমাজে তাদের ভূমিকা
বাবারা শুধু পরিবারের অর্থনৈতিক স্তম্ভই নন, তারা সন্তানদের নৈতিক ও সামাজিক শিক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বাবা হলেন সন্তানের প্রথম শিক্ষক, যিনি দায়িত্বশীলতা, পরিশ্রম এবং সাহসিকতার পাঠ দেন। জীবনের প্রতিটি চ্যালেঞ্জে বাবার সাহস ও সমর্থন সন্তানের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলে। বর্তমান সমাজে বাবারা মায়ের পাশাপাশি সন্তানদের বিকাশে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন এবং তাদের জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে নির্দেশনা দিয়ে একটি সুষ্ঠু পরিবার গঠনে অবদান রাখছেন। সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে বাবাদের এই অবদান অপরিসীম।
বিশ্ব বাবা দিবস উদযাপনের ধারা
বিশ্ব বাবা দিবস নানা দেশে বিভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপিত হয়। পরিবারগুলো বাবাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের উপহার দিয়ে তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করে। ঘড়ি, কলম, বই, শার্ট বা ব্যক্তিগত উপহার সবচেয়ে জনপ্রিয়। অনেক স্কুল ও সামাজিক সংগঠন এই দিনে বাবাদের সম্মানে অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে যেখানে শিশুরা গান, কবিতা, নাটক ও বক্তৃতার মাধ্যমে বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। বাবার সাথে সময় কাটানো, গল্প শোনা এবং জীবনের অভিজ্ঞতা বিনিময় করাও এই দিবসের অন্যতম অনুষঙ্গ।
বাংলাদেশে বাবা দিবসের গুরুত্ব ও উদযাপন
বাংলাদেশে সম্প্রতি বছরগুলোতে বিশ্ব বাবা দিবস ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন দিবসটি উদযাপন করে। পরিবারগুলো বাবাদের জন্য বিশেষ খাবার ও উপহার প্রস্তুত করে, এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বাবাদের মর্যাদা ও দায়িত্ব বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত বাবা দিবস উদযাপনের প্রথা দিন দিন গড়ে উঠছে।
বাবা দিবস উপহার ও শুভেচ্ছা প্রদানের পরামর্শ
বাবাদের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে বিশেষ দিনটি উপহার দিয়ে আরও স্মরণীয় করে তোলা যায়। বাবার পছন্দমতো ঘড়ি, কলম, বই কিংবা হাতে লেখা কার্ড উপহার হিসেবে দিতে পারেন। তবে সবচেয়ে বড় উপহার হলো সময় ও মনোযোগ। বাবার সাথে সময় কাটানো, তার কথা শোনা ও তার পছন্দমতো কাজ করা সর্বোত্তম উপহার। এতে বাবাদের মানসিক প্রশান্তি ও সন্তুষ্টি বৃদ্ধি পায়।
বাবা দিবসের গুরুত্ব ও বার্তা
বাবারা আমাদের জীবনের অন্যতম মহান নায়ক। তাদের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও পরিশ্রমের জন্য আমাদের কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। শুধু বাবা দিবসে নয়, প্রতিদিন বাবাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করা প্রয়োজন। বাবারা আমাদের জীবনের শক্তি ও প্রেরণার উৎস। তাদের প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হওয়া উচিত।
বিশ্ব বাবা দিবস ২০২৫ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, বাবাদের অবদান, ভালোবাসা ও ত্যাগ কেবল একটি দিনে নয়, সারাজীবন স্মরণীয় হওয়া প্রয়োজন। এই দিনটি বাবাদের জীবন ও সংগ্রামের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার একটি মূল্যবান সুযোগ।