সোহেল রানা মাসুদ। অনলাইন ডেস্ক।
দিনাজপুর পরিবেশ সুরক্ষা ও টেকসই মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনাজপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে দিনাজপুর পুলিশ লাইন্স পুকুরে মাছের পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। জেলা পুলিশের এই ব্যতিক্রমধর্মী পরিবেশবান্ধব কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন সম্মানিত পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন। তিনি নিজ হাতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা পানিতে অবমুক্ত করেন, যা জেলার পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপারেশনস) জনাব মোঃ আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) জনাব সিফাত-ই-রাব্বান, এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক ও এস্টেট) জনাব মোঃ মোসফেকুর রহমান। তাদের উপস্থিতি এই কর্মসূচির গুরুত্ব ও সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
পুলিশ সুপার মোঃ মারুফাত হুসাইন এই সময় বলেন, “শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষা নয়, জনগণের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিত করাও পুলিশের দায়িত্বের একটি অংশ। পরিবেশ সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় আমরা সব সময় সচেষ্ট থাকি। এই উদ্যোগের মাধ্যমে জেলার অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক সংগঠনগুলোকেও পরিবেশগত সচেতনতায় উদ্বুদ্ধ করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।”
তিনি আরও জানান, মাছের পোনা অবমুক্ত করার এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নয়, বরং স্থানীয় জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা যাবে। বিশেষ করে যারা মাছচাষ বা মাছ আহরণের সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য এটি ভবিষ্যতে আয়বর্ধক কার্যক্রম হিসেবে ভূমিকা রাখবে।
পুলিশ লাইন্স এলাকার এই পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে পরিচর্যার অভাবে অব্যবহৃত ছিল। তবে জেলা পুলিশের উদ্যোগে এটি এখন সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনা হয়েছে। মৎস্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কারিগরি সহায়তায় মাছের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করে সেখানে বিভিন্ন প্রজাতির পোনা অবমুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প প্রভৃতি।
এই উদ্যোগের পেছনে রয়েছে একটি সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা। জেলা পুলিশ চায় এই পুকুরটি একটি মডেল পুকুরে পরিণত হোক, যা শুধু মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং প্রশিক্ষণ, সচেতনতা ও স্থানীয় জনসম্পৃক্ততার দৃষ্টান্ত হিসেবেও কাজ করবে। ভবিষ্যতে এখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পরিবেশ শিক্ষা ও প্রকল্পভিত্তিক প্রশিক্ষণের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
জেলা পুলিশের এই ব্যতিক্রমধর্মী কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। সাধারণ জনগণ পুলিশ বিভাগের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এবং পরিবেশবান্ধব কর্মকাণ্ডে পুলিশের অংশগ্রহণে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।
সামগ্রিকভাবে এই কর্মসূচি শুধু একটি আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমে সীমাবদ্ধ না থেকে একটি সচেতনতা বৃদ্ধির প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে। এমন উদ্যোগ পুলিশের মানবিক ও আধুনিক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।