ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) পবিত্র আশুরা উপলক্ষে কঠোর ও সুসংহত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। আগামী ৬ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দে অনুষ্ঠিতব্য তাজিয়া মিছিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় কর্মসূচির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ কথা বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) সকালে পুরান ঢাকার হোসেনি দালান ইমামবাড়ায় শিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে ডিএমপির ভারপ্রাপ্ত কমিশনার ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মোঃ সরওয়ার বিপিএম-সেবা জানান।
ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মোঃ সরওয়ার বলেন, পবিত্র আশুরা ১০ মহররম উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীতে শিয়া সম্প্রদায়সহ অনেক সুন্নী সম্প্রদায়ও নানা কর্মসূচির মাধ্যমে শোক পালন করছে। ২৭ জুন থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত চলমান এ কর্মসূচি সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে নিরাপত্তার আওতায় রাখা হয়েছে। হোসাইনী দালান ইমামবাড়া, বড় কাটরা, মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্প, শিয়া মসজিদ, বিবিকা রওজা, মিরপুর পল্লবী বিহারী ক্যাম্প সহ ঢাকা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়ায় ইতোমধ্যে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, নিরাপত্তা জোরদার করতে এসব গুরুত্বপূর্ণ ইমামবাড়ায় সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখা হবে। যাতে যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি দ্রুত শনাক্ত এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এছাড়া, ঢাকার বিভিন্ন স্পেশাল ইউনিট ১০ মহররমের দিন সর্বোচ্চ প্রস্তুত অবস্থায় থাকবে। পবিত্র আশুরার সর্ববৃহৎ তাজিয়া মিছিল সকাল ১০টায় হোসাইনী দালান থেকে শুরু হয়ে বকশি বাজার লেন, লালবাগ চৌরাস্তা মোড়, শহীদ মাজার রোড, এতিমখানা মোড়, আজিমপুর চৌরাস্তা, নীলক্ষেত মোড়, মিরপুর রোড, ঢাকা কলেজ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকা, বিজিবি ৪নং গেইট, সাত মসজিদ রোড হয়ে ধানমন্ডি লেকে অবস্থিত কারবালায় শেষ হবে। মিছিল চলাকালীন যানজট এড়াতে ঢাকা পুলিশের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
একই প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) এস.এন. মোঃ নজরুল ইসলাম পবিত্র আশুরার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১০ মহররমের তাৎপর্য ও এর গুরুত্ব বোঝানো খুবই জরুরি। তিনি আরও জানান, একই দিনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উল্টো রথ যাত্রার অনুষ্ঠানের কারণে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি রক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। সকল ধর্মীয় অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণকারী ও সাধারণ নাগরিকদের পুলিশি নির্দেশনা অনুসরণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ মাসুদ করিম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণ এবং দেশের বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। শিয়া সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দও নিরাপত্তা পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করেন এবং ঢাকা পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ পবিত্র আশুরার মর্যাদা ও তাৎপর্যকে সম্মান জানিয়ে ধর্মীয় ও সামাজিক শান্তি বজায় রাখতে কঠোরভাবে কাজ করছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন, সিসি ক্যামেরা ও বিশেষায়িত ইউনিটের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। চলমান মিছিল ও অন্যান্য কর্মসূচির সময় নাগরিকদের নিরাপত্তার পাশাপাশি যানজট ও দুর্ভোগ কমানোর বিষয়েও বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
পবিত্র আশুরা ধর্মীয় উৎসব হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে শিয়া সম্প্রদায় কারবালার শহীদদের স্মরণে নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে। এ বছরও ঢাকা শহরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ধর্মীয় অনুষ্টান সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ডিএমপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। পুলিশ প্রশাসন সকল পক্ষের সহযোগিতা কামনা করেছে যাতে ধর্মীয় উত্সব শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়।