ক্রাইম এডিশন। অনলাইন ডেস্ক।
সূত্র: জেলা পুলিশ, ফেনী
১৬ জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, বুধবার—গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এক গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতি বিজড়িত দিন “জুলাই শহিদ দিবস” উপলক্ষ্যে ফেনী জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত হয় এক অনাড়ম্বর আলোচনা সভা। এই সভাটি মূলত জাতির জন্য আত্মত্যাগকারী জুলাই শহিদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ এবং তাঁদের সংগ্রামী ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে উপস্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলার সম্মানিত পুলিশ সুপার জনাব মোঃ হাবিবুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জুলাই শহিদরা আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষায় যেভাবে আত্মত্যাগ করেছেন, তা ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে। তাঁদের আদর্শ আমাদের প্রতিদিনের কাজের অনুপ্রেরণা হওয়া উচিত।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা যারা প্রশাসনের দায়িত্বে আছি, তাদের ওপর দায়িত্ব রয়েছে শহিদদের সেই স্বপ্নের দেশ গড়ে তোলার। তাদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, সে ব্যাপারে আমাদের সবাইকে সজাগ ও সক্রিয় থাকতে হবে।”
আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ, শহিদ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, বেসরকারি ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ এবং গণমাধ্যমকর্মীবৃন্দ।
আলোচনায় অংশ নেওয়া বক্তারা বলেন, “১৯৭৫ সালের জুলাই মাস ছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক জটিল এবং গভীর বেদনাবিধুর অধ্যায়। সে সময় যারা দেশের পক্ষে কথা বলেছিলেন, দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় সোচ্চার হয়েছিলেন—তাঁদের অনেকেই ষড়যন্ত্র ও নির্যাতনের শিকার হয়ে শহিদ হন। তাঁদের আত্মত্যাগ জাতি কখনো ভুলবে না।”
সভায় বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এই শহিদদের নাম জানে না, তাঁদের গল্প জানে না। অথচ এই ইতিহাস জানানো অত্যন্ত জরুরি। এর মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও জাতীয় চেতনা নিয়ে বড় হতে পারবে।
অনুষ্ঠানে শহিদ পরিবারের সদস্যরা তাঁদের আবেগঘন স্মৃতিচারণে বলেন, “আমরা আজও সেই দিনগুলোর কথা ভুলতে পারি না। প্রশাসনের এই আয়োজন আমাদের সম্মানিত করেছে। অন্তত এই আয়োজনগুলো প্রমাণ করে যে জাতি আমাদের ভুলে যায়নি।”
শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে আরও দাবি জানানো হয়, যেন সরকারি পর্যায়ে নিয়মিতভাবে তাঁদের খোঁজখবর নেওয়া হয় এবং শহিদ পরিবারের সন্তানদের শিক্ষা ও জীবিকার উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
আলোচনার পরপরই অনুষ্ঠিত হয় দোয়া মাহফিল ও এক মিনিটের নীরবতা পালন। সকল শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মিলাদ ও মোনাজাত পরিচালনা করা হয়।
অনুষ্ঠান শেষে পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও আমন্ত্রিত অতিথিরা শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁদের নামে নির্মিত সম্ভাব্য স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনার কথা জানান।
এ ধরনের আলোচনা সভা শুধু স্মরণেই সীমাবদ্ধ না থেকে, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্রের আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে—এমনটাই আশা প্রকাশ করেন উপস্থিত বক্তারা।
Leave a Reply