ক্রাইম এডিশন। ডেস্ক রিপোর্ট
ঢাকার উত্তরা এলাকায় ঘটে যাওয়া হৃদয়বিদারক বিমান দুর্ঘটনার পর সোমবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মাইলস্টোন স্কুল ও কলেজের ক্যাম্পাসে একটি বিমান বিধ্বস্ত হলে মুহূর্তেই ঘটনাস্থলে নেমে আসে বিভীষিকা। এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ২০ জন।
ফায়ার সার্ভিসের নয়টি ইউনিট সঙ্গে সঙ্গে আগুন নেভানোর ও উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সদস্যরাও যুক্ত হন অভিযানে। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে সিএমএইচ, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
ঘটনাস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, দুপুর ২টা ২৫ মিনিটের দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরে ক্রেনের মাধ্যমে ধ্বংসপ্রাপ্ত বিমানটির অংশবিশেষ ধীরে ধীরে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়। বেশ কিছু অংশ স্কুল ভবনের ওপর পড়ে ছিল, যা সরাতে সময় লেগেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানটি আকাশে ভারসাম্য হারিয়ে দ্রুত নেমে এসে স্কুল ক্যাম্পাসের মধ্যেই আছড়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বিকট শব্দে দৌঁড়ে যান ঘটনাস্থলে। প্রথমে আগুন ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয় ফায়ার সার্ভিসকে।
জানা গেছে, বিমানে থাকা অধিকাংশ যাত্রীই পুড়ে গেছেন এবং কিছু মরদেহ এতটাই বিকৃত যে, পরিচয় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে শনাক্ত হওয়া মরদেহগুলো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে এবং বাকিদের ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে, দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব ও সংস্থার পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার ঘটনায় শোক প্রকাশ করা হয়েছে। জামায়াত ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান, প্রধান বিচারপতি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য পৃথকভাবে শোকবার্তা পাঠিয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনার অন্যতম আলোচিত বিষয় হলো, বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটি ১৯৬৬ সালের তৈরি একটি পুরনো মডেল বলে জানা গেছে, যা এখনো আকাশে ওড়ার অনুমতি কীভাবে পেল, সে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সাধারণ মানুষ ও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। অনেকে এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন।
এছাড়া দুর্ঘটনার পরপরই বার্ন ইনস্টিটিউটে রক্তদাতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কর্তৃপক্ষ বিশেষভাবে ‘নেগেটিভ’ রক্ত গ্রুপের রক্তদাতাদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য মতে, আহতদের অনেকের অবস্থা গুরুতর এবং উন্নত চিকিৎসা চলছে।
সরকারি সূত্র থেকে জানানো হয়েছে, একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত শেষে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেওয়া হয়েছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা দেশের সাধারণ মানুষের মনে গভীর দাগ কেটে গেছে। প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা ও পর্যাপ্ত তদারকির বিষয়ে। কেবল তদন্ত নয়, ভবিষ্যতে এমন দুর্ঘটনা এড়াতে কঠোর নীতিমালা প্রয়োগের জোর দাবি উঠছে বিভিন্ন মহল থেকে।