ক্রাইম এডিশন, অনলাইন ডেস্ক
বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার সান্তাহার রেলস্টেশনের ১ নম্বর রেলগেটে ঘটলো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। রবিবার (২৭ জুলাই ২০২৫) দুপুর আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লালমনিরহাটগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় প্রাণ হারান নাছিম আহমেদ জয় নামের এক মেধাবী যুবক। নিহত জয় ছিলেন একজন পেশাদার মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং আমেরিকা প্রবাসী।
জয়ের বাড়ি বগুড়ার আদমদিঘি উপজেলার কোমরভাগ চকসোনার গ্রামে। তিনি আব্দুর রাজ্জাক মাস্টারের ছেলে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত থাকলেও কিছুদিন আগে ছুটিতে দেশে ফেরেন। স্বজনদের সাথে কিছুটা সময় কাটাতে দেশে আসলেও, তা রয়ে গেলো সীমিত। হঠাৎ এক অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় তার জীবন থেমে যায় রেললাইনের ধারে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, সান্তাহার স্টেশনের ১ নম্বর রেলগেটের দায়িত্বে থাকা গেটম্যান তাকে থামার জন্য বারবার সতর্ক করেন। কিন্তু জয় সেই সতর্কতা উপেক্ষা করে দ্রুত রেললাইন পার হতে যান। এ সময় দ্রুতগামী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি তাকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু ঘটে।
এই ঘটনায় সান্তাহার এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। এলাকার মানুষজন এই মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে চরমভাবে মর্মাহত। জয় ছিলেন একজন ভদ্র, শিক্ষিত ও ভদ্রবেশী তরুণ। তার এই অকাল মৃত্যু শুধু পরিবার নয়, গোটা এলাকাকে শোকগ্রস্ত করেছে।
স্বজনরা জানান, জয় আমেরিকার একটি আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিতে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত ১০ দিন আগে তিনি ছুটিতে দেশে আসেন। পরিবারের সঙ্গে কিছু সময় কাটাতে তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। রবিবার দুপুরে ব্যক্তিগত কাজে বাইরে বের হন এবং রেললাইন পার হতে গিয়ে জীবন হারান।
এই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রেলওয়ে কর্মকর্তা ও পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে তার নিজ গ্রামে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী জানাজা শেষে দাফন কার্য সম্পন্ন করা হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তারা বলেন, রেলগেটে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। অনেক সময় গেটম্যানের সতর্কতা সত্ত্বেও মানুষ অসতর্কভাবে রেললাইন পার হতে যান, যা প্রাণঘাতী হয়ে দাঁড়ায়।
স্থানীয়দের দাবি, সান্তাহার রেলস্টেশনের আশেপাশের রেলগেটগুলোতে স্বয়ংক্রিয় গেটিং সিস্টেম চালু করা হোক এবং ট্রেন চলাচলের সময় রেলগেটের নিয়ন্ত্রণ আরো কঠোর করা হোক।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু গেটম্যানের উপর নির্ভর না থেকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমাধান। মানুষের মধ্যে রেলক্রসিং পারাপারের সময় সতর্ক হওয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সরকারেরও উচিত রেললাইন সংলগ্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি স্থাপন করা।
নাছিম আহমেদ জয়ের এই মর্মান্তিক মৃত্যু আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, রেলক্রসিংয়ে অমনোযোগিতা কতটা ভয়াবহ পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। একজন শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত ও সম্ভাবনাময় তরুণের মৃত্যু যেন অজস্র প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে – কেন আমরা এখনো সচেতন হইনি?
পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীর একটাই প্রত্যাশা—এই মৃত্যু যেন আর কারো জীবনে না আসে। এই ঘটনা হোক একটি শিক্ষা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ রেললাইনের ধারে এমন দুঃখজনক ঘটনার শিকার না হয়।