ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
“একজন সত্যিকারের বন্ধু সেই, যে তোমার সম্পর্কে সবকিছু জানে, তবুও তোমাকে ভালোবাসে।” — এই গভীর উপলব্ধির কথাটি যেনই তুলে ধরে আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসের আসল বার্তা। সম্পর্কের ভিন্ন ভিন্ন রঙের মাঝে বন্ধুত্ব হলো সেই আবেগপূর্ণ বন্ধন, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ কিংবা সামাজিক অবস্থানের ঊর্ধ্বে উঠে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সহমর্মিতার পরিচয় দেয়।
বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ৩০ জুলাই উদযাপন করা হয় আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস। এই দিনটির সূচনা হয়েছিল ১৯৫৮ সালে, প্যারাগুয়ের ‘ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড’ নামক একটি সংগঠনের মাধ্যমে। এর প্রস্তাবক ছিলেন ডাক্তার রামন আর্টেমিও ব্রাকো, যিনি ৩০ জুলাই দিনটিকে বন্ধুদের সম্মানে উৎসর্গ করেন। এরপর বহু বছর ধরে এই দিনটি সীমিত পরিসরে পালন হলেও, ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ৩০ জুলাইকে “আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস” হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে।
জাতিসংঘ এই দিবসটিকে কেবল বন্ধুত্ব উদযাপনের দিন হিসেবে নয়, বরং বিশ্ব শান্তি, সম্প্রীতি ও মানবিক সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটানোর একটি বড় উদ্যোগ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, সংস্কৃতি ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা এই দিবসের মূল লক্ষ্য।
তবে উল্লেখযোগ্যভাবে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বন্ধুত্ব দিবস পালনের তারিখ এক নয়। যেমন—ভারতে প্রতি বছর আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধুত্ব দিবস পালিত হয়। ব্রাজিল, উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার মতো দেশে ২০ জুলাই দিনটিকে বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে গণ্য করা হয়। আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৩০ সালের পর হতে ‘ফ্রেন্ডশিপ ডে’ পালন শুরু হলেও তা ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা হারায়।
বন্ধুত্ব দিবসের ইতিহাস আরও অনেক বিস্ময়কর তথ্য বহন করে। ১৯৯৮ সালে জাতিসংঘ বন্ধুত্ব দিবসের সম্মানে “উইনি দ্য পোহ” নামক জনপ্রিয় চরিত্রটিকে “বিশ্ববন্ধুত্বের রাষ্ট্রদূত” হিসেবে মনোনীত করে। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ বন্ধুত্বের গুরুত্ব ও এর প্রভাবকে নতুন করে তুলে ধরে।
বন্ধু মানে শুধু স্কুল-কলেজ বা শৈশবের খেলার সাথী নয়। জীবনের প্রতিটি পর্যায়েই একজন বিশ্বস্ত বন্ধু সবচেয়ে বড় সহায়। একক পরিবারে বা কর্মব্যস্ত জীবনে বন্ধুদের সান্নিধ্য মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়। এমনকি বয়ঃজ্যেষ্ঠদের জীবনেও বন্ধুত্বের গুরুত্ব অপরিসীম।
বিখ্যাত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, “আমরা বন্ধুর কাছ থেকে মমতা চাই, সমবেদনা চাই, সাহায্য চাই ও সেই জন্যই বন্ধুকে চাই।” এই উক্তিটি বুঝিয়ে দেয় বন্ধুত্বের সম্পর্ক কেবল সামাজিক নয়, মানসিক ও আত্মিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
আজকের দিনে মানুষ নানা উপায়ে বন্ধুদের সঙ্গে এই বিশেষ দিনটি উদযাপন করে। কেউ ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড উপহার দিয়ে, কেউ বন্ধুর সঙ্গে সময় কাটিয়ে আবার কেউ সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব নিয়ে পোস্ট করে এই দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলে। তবে দিনটি উদযাপনের পাশাপাশি এর ইতিহাস ও তাৎপর্য জানাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে বিভিন্নভাবে—পারিবারিক বন্ধনে, পেশাগত সম্পর্কের মধ্য দিয়ে, অথবা হঠাৎ কোনো অচেনা সহৃদয়ের সঙ্গে। এই সম্পর্কের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই, নেই কোনো সীমানা। বন্ধুত্ব এমন এক সম্পর্ক, যা ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মানবিকতার নিখাদ প্রকাশ ঘটায়।
বন্ধুত্ব দিবসের এই দিনে আমরা যদি শপথ নেই—নতুন বন্ধুকে আপন করে নেওয়া, পুরনো বন্ধুকে আরও ভালোবাসা দেওয়া এবং সমাজে সহানুভূতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার, তাহলে এই দিবসের প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে।
বন্ধুত্বের বন্ধন আরও দৃঢ় হোক, সম্পর্ক আরও মানবিক হোক—এই হোক আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবসের অঙ্গীকার।
শুভ আন্তর্জাতিক বন্ধুত্ব দিবস!
Leave a Reply