ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশের অপ্রীতিকর আচরণের শিকার হয়েছেন দুই সাংবাদিক। তারা অভিযোগ করেছেন, থানায় গিয়ে তাদের সঙ্গে রূঢ়ভাবে কথা বলা হয়, এমনকি একপর্যায়ে পুলিশি হস্তক্ষেপের হুমকিও পান।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর তিনটার দিকে। সাংবাদিকরা হলেন দৈনিক কালবেলার রংপুর প্রতিনিধি রেজওয়ান রনি এবং প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক জহির রায়হান।
জানা গেছে, রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাদপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লিতে সম্প্রতি একটি সহিংসতার ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পাশের কিশোরগঞ্জ উপজেলার সীমানায় মাইকিং করে একদল লোক সিঙ্গেরগাড়ি বাজার এলাকায় সমবেত হয় এবং পরে একটি হিন্দুপল্লিতে হামলার অভিযোগ ওঠে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, এ সময় পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও তারা ঘটনার প্রতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন।
এই বিষয়ে তথ্য যাচাই এবং পুলিশের বক্তব্য নিতে সাংবাদিকদ্বয় কিশোরগঞ্জ থানায় যান। কিন্তু সেখানে উপস্থিত হয়ে তারা কিশোরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল ইসলামের কাছ থেকে প্রত্যাশিত আচরণ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
সাংবাদিকদের ভাষ্য মতে, ওসির সঙ্গে কথা বলার শুরুতে তিনি ঘটনার সত্যতা অস্বীকার করেন। এরপর তারা কিছু প্রশ্ন করলে ওসি অসন্তুষ্ট হয়ে তির্যক মন্তব্য করেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, “আপনারা উসকানি দিতে এসেছেন, সব জানি আমরা। যোগ্যতা থাকলে সাংবাদিক না হয়ে ভালো কিছু করতেন।”
এছাড়া সাংবাদিক রেজওয়ান রনিকে লক্ষ্য করে তিনি বলেন, “চোখ দিয়ে এভাবে তাকাচ্ছেন কেন?” তারপর পাশে থাকা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “ধরেন তো এদের।”
ঘটনাস্থলে থাকা এসআই মহসিন পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। তিনি সাংবাদিকদের থানা থেকে নিরাপদে বের করে দেন। তবে অভিযোগ রয়েছে, ওসি আশরাফুল ইসলাম তখনো তাদের উদ্দেশে অপমানজনক মন্তব্য করে যাচ্ছিলেন।
এই ঘটনা সাংবাদিক সমাজে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
নীলফামারী সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক রিপন শেখ বলেন, “সাংবাদিকরা মাঠে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন জনগণের জানার অধিকার নিশ্চিত করতে। সেখানে যদি তারা বাধার মুখে পড়েন, সেটি নিন্দনীয়।”
রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, “এটি শুধু অপ্রীতিকর ঘটনা নয়, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হুমকি। দোষী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না হলে আমরা আন্দোলনে যাব।”
বিষয়টি নিয়ে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি মো. আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।
স্থানীয়ভাবে এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন, একজন সাংবাদিক তথ্য সংগ্রহে গেলে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পুলিশ প্রশাসনের দায়িত্ব।
এদিকে সাংবাদিকদের একটি সূত্র জানিয়েছে, তারা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাংবাদিকরা বলেছেন, “এমন ঘটনা পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করে। আমরা চাই দোষীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত ও ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”
ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলে প্রকৃত সত্য উদঘাটন হবে এবং ভবিষ্যতে সাংবাদিকদের নিরাপদে দায়িত্ব পালনে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন অনেকে।
Leave a Reply