নুরন্নবী হাসান হিমু, ক্রাইম এডিশন
লালমনিরহাটে পুলিশ পরিচালিত বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযানে বিপুল পরিমাণ গাঁজাসহ এক যুবককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা সড়ক সেতুর উত্তর পাশে স্থাপিত চেকপোস্টে এই অভিযান পরিচালিত হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলাম-এর সার্বিক নির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানে গত ৯ আগস্ট ২০২৫ তারিখে এই বিশেষ অভিযান পরিচালিত হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ দমন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লালমনিরহাট থানার একটি টহল দল ওইদিন সকাল থেকে তিস্তা সড়ক সেতুর উত্তর পাশে পাকা সড়কে যানবাহন তল্লাশি ও মাদকবিরোধী চেকপোস্ট কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।
অভিযান চলাকালীন সময়ে সন্দেহভাজনভাবে এক ব্যক্তিকে থামিয়ে তল্লাশি করা হয়। পরে তার কাছ থেকে ৩ কেজি ২০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়। আটক ব্যক্তির নাম মোঃ সাইয়েদুল ইসলাম (৩০)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি মাদকদ্রব্য সংগ্রহ ও বিক্রির সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, মাদকদ্রব্য পাচার ও বিক্রি বন্ধে জেলা জুড়ে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই অভিযানে জড়িত পুলিশ সদস্যরা বিশেষ সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। উদ্ধার হওয়া গাঁজা পরিমাপের পর প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
আটককৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং তাকে আদালতে সোপর্দের প্রস্তুতি চলছে। পুলিশ আশা করছে, এই ধরনের অভিযান মাদককারবারিদের আতঙ্কিত করবে এবং তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।
জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয়, পরিবার ও সমাজকে ধ্বংস করে দেয়। আমরা চাই নাগরিকরা এগিয়ে এসে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করুক, যাতে মাদকের শিকড় উপড়ে ফেলা যায়।” তিনি আরও জানান, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শুধু শহর নয়, গ্রামাঞ্চল ও সীমান্তবর্তী এলাকাতেও চেকপোস্ট ও হঠাৎ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
মাদকবিরোধী সচেতনতা জরুরি
মাদকের বিস্তার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, শুধু আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই হবে না, পরিবার ও সমাজের প্রতিটি স্তরে মাদকবিরোধী সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। যুবসমাজকে খেলাধুলা, সংস্কৃতি ও ইতিবাচক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করার মাধ্যমে তাদেরকে মাদক থেকে দূরে রাখা সম্ভব।
এছাড়া, মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গণমাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান পুলিশ কর্মকর্তারা। সামাজিক মাধ্যমে মাদকবিরোধী বার্তা প্রচার, পোস্টার-ব্যানার স্থাপন এবং গণসচেতনতামূলক সভা আয়োজনের মাধ্যমে এ লড়াই আরও শক্তিশালী করা সম্ভব বলে তারা মনে করেন।
পুলিশের বার্তা
পুলিশ মাদকবিরোধী লড়াইয়ে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রচার করছে:
1. মাদককে না বলুন – মাদকের প্রলোভন থেকে দূরে থাকুন এবং পরিবার-পরিজনকেও দূরে রাখুন।
2. মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলুন – স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন ও নজরদারি চালু করুন।
3. পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন – সন্দেহজনক মাদক ব্যবসা বা পাচারের তথ্য দ্রুত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, এই বার্তাগুলো সাধারণ মানুষের মনে পৌঁছাতে পারলেই মাদকের বিরুদ্ধে একটি দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকায় জেলার বিভিন্ন স্থানে মাদককারবারিদের কার্যক্রম কিছুটা হলেও সীমিত হয়েছে বলে দাবি করছেন স্থানীয়রা। তবে পুলিশের মতে, এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং চূড়ান্ত সাফল্যের জন্য সবার অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আবারও জানানো হয়েছে—যেকোনো তথ্য, অভিযোগ বা সহায়তার জন্য নাগরিকরা সরাসরি থানায় যোগাযোগ করতে পারবেন অথবা হটলাইন নম্বরে তথ্য দিতে পারবেন।