ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী দাবি করেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোনো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। তিনি বলেন, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংস্কার ছাড়া ভোট আয়োজন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবে না এবং এটি গণতান্ত্রিক আদর্শের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে না।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর কেআইবি মিলনায়তনে জাতীয় যুবশক্তি আয়োজিত "জাতীয় যুব সম্মেলন"-এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এই মন্তব্য করেন। তার বক্তব্যে তিনি দেশের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া, সাংবিধানিক কাঠামো এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থার ভূমিকা নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরেন।
সংস্কার ছাড়া ভোট আয়োজন গ্রহণযোগ্য নয়
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের আগে আমাদের শহীদ ভাইদের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে, আহতদের সুস্থতা ফিরিয়ে দিতে হবে। দেশের জন্য যারা আত্মত্যাগ করেছেন, তাদের ত্যাগের যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে।”
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনা এবং একটি নতুন সংবিধান প্রণয়ন ছাড়া নির্বাচন আয়োজন হলে জনগণের দাবি পূরণ হবে না। তার মতে, একই ধরণের ব্যবস্থার মধ্যে থেকে বারবার নির্বাচন করলে অতীতের ত্যাগ-তিতিক্ষার কোনো মানে থাকে না।
তরুণদের হাতেই রাজনৈতিক পরিবর্তন
এনসিপি নেতা তরুণ প্রজন্মকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “গণভবনের মতো বঙ্গভবনের পরিবর্তনও তরুণদের হাত ধরেই আসবে।” তিনি তরুণদের দায়িত্বশীল ও গণতান্ত্রিক পথে অটল থাকার আহ্বান জানান।
গোয়েন্দা সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে সমালোচনা
তার বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর কার্যক্রম নিয়েও সমালোচনা করেন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। তিনি বলেন, “ডিজিএফআইয়ের একমাত্র কাজ যেন মানুষকে ভয় দেখানো। আমরা ইতোমধ্যেই ভীতি প্রদর্শনের ‘আয়নাঘর’ ভেঙে দিয়েছি। প্রয়োজনে তাদের সদর দপ্তরও সংস্কারের আওতায় আনা হবে।”
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোকে জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে হবে, শাসকগোষ্ঠীর হাতিয়ার হিসেবে নয়।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও জনগণের প্রত্যাশা
নাসীরুদ্দীনের এই বক্তব্য আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে সংস্কার ও নতুন সংবিধানের দাবি তার রাজনৈতিক অবস্থানকে স্পষ্ট করে তুলেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বক্তব্য মূলত ভোটারদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
তারা আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের আস্থা অর্জন করতে চায়, তবে সংস্কার, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
যুবসমাজের প্রত্যাশা
জাতীয় যুব সম্মেলনে উপস্থিত তরুণরা তাদের মতামত ব্যক্ত করে বলেন, দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা সময়ের দাবি। তারা মনে করেন, শিক্ষিত, দক্ষ ও সৎ নেতৃত্ব গড়ে তোলাই দেশের অগ্রগতির একমাত্র পথ।
তরুণরা আরও বলেন, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, আইনের শাসন নিশ্চিতকরণ এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হলে দেশের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে।
শেষকথা
নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর বক্তব্য কেবল ফেব্রুয়ারির নির্বাচন নিয়ে সন্দেহই প্রকাশ করেনি, বরং সংস্কার ও নতুন সংবিধান প্রণয়নের দাবি পুনরায় সামনে নিয়ে এসেছে। তার বক্তব্যে তরুণ প্রজন্মকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই ধরনের বক্তব্য ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক আন্দোলন, নির্বাচনী কৌশল ও রাষ্ট্রীয় নীতি প্রণয়নে প্রভাব ফেলতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।