আব্দুস সোবহান মোল্লা, গাজীপুর প্রতিনিধি
গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় রোয়া ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা বকেয়া বেতনভাতা পরিশোধের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভ চালিয়েছে। সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানার সামনে একত্রিত হয়ে তাদের পাওনাদির দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি জানান। বিক্ষোভ চলাকালে তারা আশপাশের অন্যান্য কারখানায় গিয়ে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে ভাঙচুর করলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই কারণে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বজায় রাখতে ওই ২৯টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রোয়া ফ্যাশন লিমিটেডের শ্রমিকরা জুলাই মাসের বেতন ও ভাতা না পাওয়ায় হতাশার সম্মুখীন। মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করে আর্থিক ক্ষতির কথা উল্লেখ করে কারখানাটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে। এতে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে এবং তারা কারখানার সামনে অবস্থান নেয়।
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আশপাশের অন্যান্য কারখানায় গিয়ে আন্দোলনে যোগ দিতে চেষ্টা করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে তারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে, যা দুটি দিকের যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে গাড়ি ও যাত্রীদের মধ্যে দীর্ঘ জট তৈরি হয়।
গাজীপুর শিল্পপুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার পর ১৪ আগস্ট কলকারখানা অধিদপ্তরে গিয়ে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা অবরোধ প্রত্যাহার করে। তারা পুনরায় কারখানার সামনে অবস্থান করলেও যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
রোয়া ফ্যাশন লিমিটেডের মালিক এনায়েত করিম বলেন, “শ্রমিকরা তাদের এক মাসের বেতন পাবেন। বকেয়া টাকা পরিশোধের জন্য আমি জমি বিক্রি করছি। আশা করি, কয়েক দিনের মধ্যে বকেয়া বেতন দেওয়া সম্ভব হবে।” তিনি আরও বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য শ্রমিকদের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করা এবং পরিস্থিতি শান্ত রাখা।”
স্থানীয়রা বলছেন, এই ধরনের বিক্ষোভ শুধুমাত্র শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার জন্য। তারা মনে করিয়ে দেন যে, নিয়মিত বেতন না দিলে কর্মক্ষেত্রে স্থায়ী অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। এ ধরনের ঘটনা শিল্পাঞ্চলের অন্যান্য কারখানার শ্রমিকদের মধ্যেও উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস এলাকায় শিল্পাঞ্চল সম্প্রসারণের কারণে প্রচুর শ্রমিক এখানে কর্মরত। বেতন ও সুবিধা ঠিকভাবে না দিলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ এবং সংঘাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এই বিক্ষোভ প্রমাণ করে যে, শ্রমিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করা এবং তাদের বেতন সময়মতো প্রদান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
শ্রমিক নেতারা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে তাদের দাবি পূরণ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হবে। তারা উল্লেখ করেছেন যে, শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি ও অধিকার স্বীকৃত না হলে শিল্পাঞ্চলে শান্তি বজায় রাখা কঠিন হয়ে যাবে।
উল্লেখযোগ্য হলো, রোয়া ফ্যাশন লিমিটেডে চলমান এই বিক্ষোভ একটি সাধারণ শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের উদাহরণ। এতে কোনো ধরনের সহিংসতা বা মানবিক ক্ষতি ঘটেনি, তবে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে কিছু ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন এবং পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছেন।
এই ঘটনা বাংলাদেশের শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অধিকার রক্ষার গুরুত্ব আবারও প্রমাণ করেছে। শ্রমিকদের নিয়মিত বেতন প্রদানের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও উৎপাদনশীল পরিবেশ নিশ্চিত করা সম্ভব। শিল্প মালিক এবং প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় থাকলে এ ধরনের সমস্যা কমে আসে।
Leave a Reply