ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
মৌলভীবাজার পুলিশ লাইন্স প্রাঙ্গণে অগ্নি-নির্বাপণ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মশালা ও মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা পুলিশের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মশালায় সহযোগিতা করে মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য ছিল পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে অগ্নি দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও অগ্নি-নির্বাপণ কৌশল বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণের দক্ষতা উন্নয়ন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও বক্তব্য
মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) সকালে পুলিশ লাইন্সে অনুষ্ঠিত কর্মশালার উদ্বোধন করেন মৌলভীবাজার জেলার পুলিশ সুপার জনাব এম. কে. এইচ. জাহাঙ্গীর হোসেন, পিপিএম (সেবা)। তিনি বলেন, আধুনিক যুগে শুধু অপরাধ দমন নয়, পুলিশকে মানবিক সেবার প্রতিটি ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। অগ্নিকাণ্ডের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে পুলিশের দ্রুত সাড়া এবং সঠিক পদক্ষেপ জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
পুলিশ সুপার আরও উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, এমনকি যানবাহনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি এখন সময়ের দাবি। এ জন্য পুলিশ সদস্যদের নিয়মিতভাবে অগ্নি-নির্বাপণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ জরুরি।
উপস্থিত কর্মকর্তারা
কর্মশালায় জেলার শীর্ষ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) জনাব আসিফ মহিউদ্দীন, পিপিএম; অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) জনাব নোবেল চাকমা, পিপিএম; অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) জনাব মোঃ আজমল হোসেন; অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) জনাব আবুল খায়ের এবং সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল সার্কেল) জনাব আনিসুর রহমান।
এ ছাড়াও জেলার প্রতিটি থানা ও বিভিন্ন ইউনিটের ইনচার্জ, পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার সদস্যবৃন্দ এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহড়া ও প্রদর্শনী
কর্মশালায় ফায়ার সার্ভিসের প্রশিক্ষকরা অগ্নি-নির্বাপণের নানা কৌশল হাতে-কলমে প্রদর্শন করেন। তারা অংশগ্রহণকারীদের শেখান কীভাবে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
মহড়ায় বিভিন্ন পরিস্থিতি কল্পনা করে দেখানো হয়— যেমন গৃহস্থালী গ্যাস লিক থেকে অগ্নিকাণ্ড, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে আগুন, যানবাহনে আগুন লাগা এবং উঁচু ভবনে আগুন ধরে গেলে কীভাবে মানুষকে উদ্ধার করতে হবে। পুলিশ সদস্যরা সক্রিয়ভাবে এতে অংশ নেন এবং প্রত্যেকে হাতে-কলমে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার করার অনুশীলন করেন।
জনসচেতনতার দিকটিও গুরুত্ব পেল
কর্মশালার আলোচনায় বক্তারা উল্লেখ করেন, অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ শুধু ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের দায়িত্ব নয়; বরং এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। প্রতিটি বাড়ি, অফিস বা প্রতিষ্ঠানে প্রাথমিক অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম রাখা এবং নিয়মিত চেক করা জরুরি। পাশাপাশি গ্যাস লাইন, বৈদ্যুতিক তার, রান্নাঘরের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ নির্মাণকাজের ওপরও জোর দেওয়া হয়।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেন, আগুন লাগলে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় ভিড় সৃষ্টি করে, যা উদ্ধার কাজকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই জনগণের সচেতনতা বাড়ানো এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
কর্মশালায় জানানো হয়, জেলা পুলিশের উদ্যোগে নিয়মিতভাবে এ ধরনের প্রশিক্ষণ কর্মশালা ও মহড়া চালিয়ে যাওয়া হবে। শুধু পুলিশ নয়, স্কুল-কলেজ, সরকারি-বেসরকারি অফিস, বাজার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লোকজনকেও এ প্রশিক্ষণের আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া আগুন লাগলে জরুরি নাম্বারে দ্রুত যোগাযোগ করার পরামর্শও দেওয়া হয়।
সমাপনী বক্তব্য
অনুষ্ঠানের শেষে পুলিশ সুপার অংশগ্রহণকারী সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, “প্রশিক্ষণ কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং এটি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আমরা যদি সবাই নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে অগ্নিকাণ্ডের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।”
অংশগ্রহণকারীরা এমন কর্মশালা আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং ভবিষ্যতেও নিয়মিত এরকম প্রশিক্ষণ আয়োজন করার আহ্বান জানান।