ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
রংপুর জেলায় বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রথম দিনের কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫ খ্রি.) সকাল আটটায় রংপুর জেলা পুলিশ লাইন্স মাঠে দিনব্যাপী এ পরীক্ষা শুরু হয়। শূন্যপদে প্রকৃত যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীদের যাচাই–বাছাই করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই পরীক্ষায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
প্রাথমিকভাবে বাছাই করা প্রার্থীদের শারীরিক মাপ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাইকরণ করা হয়। এই ধাপটি সম্পন্ন করার মাধ্যমে প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীদের নিশ্চিত করার চেষ্টা চালানো হয়, যাতে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা বজায় থাকে।
পরীক্ষা কার্যক্রমের সার্বিক তদারকি ও দিকনির্দেশনায় ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সম্মানিত সভাপতি পুলিশ সুপার মোঃ আবু সাইম। তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে আগত একজন পুলিশ সুপার, রংপুর রেঞ্জ অফিস থেকে একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং রংপুর রেঞ্জের অন্য জেলা থেকে আগত আরও একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও সরেজমিনে উপস্থিত থেকে কার্যক্রমকে সফল ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সহযোগিতা করেন।
শারীরিক মাপ যাচাইয়ের পাশাপাশি কাগজপত্র পরীক্ষা ছিল এ দিনের প্রধান ধাপ। প্রার্থীদের শারীরিক যোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য উচ্চতা, ওজন, বুকের মাপ ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। একইসঙ্গে জমাকৃত শিক্ষাগত সনদপত্র ও জাতীয় পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় নথির সত্যতা যাচাই করা হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রার্থীদের মানসিক দৃঢ়তা ও আন্তরিকতাও স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
এ ধরনের পরীক্ষা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে যোগ দেওয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। কারণ পুলিশ বাহিনী শুধু কর্মসংস্থানের মাধ্যম নয়, বরং দেশের জনগণের সেবায় নিয়োজিত একটি মহৎ প্রতিষ্ঠান। সঠিক যোগ্যতা ও মানসিক দৃঢ়তার ব্যক্তিদের বেছে নেওয়া হলে সমাজের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
প্রথম দিনের কার্যক্রম শেষে পুলিশ সুপার মোঃ আবু সাইম পরীক্ষায় অংশ নেওয়া কৃতকার্য প্রার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশ সবসময় যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ। মেধা, দক্ষতা ও সততার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো প্রকৃত যোগ্য তরুণদের পুলিশ বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করা, যাতে তারা দেশ ও জনগণের সেবায় নিয়োজিত হতে পারে।”
এছাড়াও তিনি পরীক্ষার কাজে নিয়োজিত জেলা পুলিশের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্তদের ধন্যবাদ জানান। কারণ তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও দায়িত্বশীলতার মাধ্যমেই প্রথম দিনের কার্যক্রম শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়।
রংপুর জেলা পুলিশ জানায়, নিয়োগ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ কঠোর নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতার মধ্যে দিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। যাতে কোনো প্রকার অনিয়ম, পক্ষপাতিত্ব কিংবা অস্বচ্ছতা প্রবেশ করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে। প্রার্থীরা এদিন দায়িত্বশীলভাবে পরীক্ষা দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে।
প্রথম দিনের পরীক্ষায় যারা শারীরিক সক্ষমতা ও কাগজপত্র যাচাই ধাপ অতিক্রম করেছে, তারা পরবর্তী ধাপের জন্য নির্বাচিত হবে। এভাবে ধাপে ধাপে সকল যোগ্য প্রার্থীকে বাছাই করে বাংলাদেশ পুলিশের ভবিষ্যৎ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
উল্লেখ্য, দেশের বিভিন্ন জেলায় একযোগে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে রংপুর জেলাতেও পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু হলো। আগামী দিনগুলোতেও ধারাবাহিকভাবে এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যোগদান শুধু কর্মজীবনের শুরু নয়, বরং একটি দায়িত্বপূর্ণ জীবনযাত্রারও প্রতীক। বাংলাদেশ পুলিশে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার মাধ্যমে একজন প্রার্থী সমাজে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অপরাধ দমন এবং জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদটি তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং কিন্তু মর্যাদাপূর্ণ সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
প্রথম দিনের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রার্থীদের মধ্যে যেমন স্বস্তি বিরাজ করছে, তেমনি সাধারণ জনগণও আশা করছে—স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মেধাবী, যোগ্য ও সৎ প্রার্থীরাই ভবিষ্যতে বাংলাদেশ পুলিশের দায়িত্বভার গ্রহণ করবে।