ক্রাইম এডিশন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় পুলিশের বিশেষ অভিযানে দুই নারী মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়েছেন। এসময় তাদের কাছ থেকে ৪৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। বুধবার (২০ আগস্ট ২০২৫) বিকেলে হাতীবান্ধা উপজেলার ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান পরিচালনার পটভূমি
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলার পুলিশ সুপার মোঃ তরিকুল ইসলামের সার্বিক দিকনির্দেশনায় হাতীবান্ধা থানা পুলিশের একটি দল মাদকবিরোধী এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানের আগে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, ভেলাগুড়ি ইউনিয়নের জনৈক মানিক মেম্বারের বাড়ির সামনের পাকা রাস্তায় মাদকদ্রব্যসহ কয়েকজন অবস্থান করছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
অভিযানের সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কয়েকজন পালিয়ে গেলেও দুই নারীকে আটক করা হয়। পরে তাদের দেহ তল্লাশি করে ৪৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত ফেন্সিডিলসহ আটক নারীদের থানায় আনা হয়।
গ্রেফতারকৃত আসামিরা
পুলিশ জানায়, আটককৃত দুই নারী হলেন—
১. মোছাঃ বন্যা আক্তার মিম (২০)
২. মোছাঃ শুখু মনি (২২)
তারা হাতীবান্ধা উপজেলাসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক সরবরাহে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।
পুলিশের বক্তব্য
হাতীবান্ধা থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে মোট ৪৯ বোতল ফেন্সিডিল জব্দ করা হয়। আটক আসামিদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে আদালতে পাঠানো হবে।
অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা বলেন, “মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারির বাইরে যেতে পারবে না। নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।”
স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া
স্থানীয়রা জানান, এ এলাকায় কিছুদিন ধরে মাদক কেনাবেচা চলছে বলে তাদের ধারণা ছিল। অভিযানে দুই নারী গ্রেফতার হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে স্বস্তি নেমে এসেছে। তারা আশা করছেন, পুলিশের নিয়মিত তৎপরতায় এলাকায় মাদকের বিস্তার অনেকাংশে কমে আসবে।
একজন স্থানীয় শিক্ষক বলেন, “আমরা বহুদিন ধরে আশঙ্কা করছিলাম এলাকায় মাদক ব্যবসা চলছে। পুলিশের অভিযানে দুজন ধরা পড়েছে, এটি ভালো দিক। আমরা চাই এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকুক।”
সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক প্রবাহ
লালমনিরহাট একটি সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এখানে ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য প্রবেশের ঝুঁকি থাকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত অভিযানের মাধ্যমে এসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ায় এ প্রবাহ অনেকটা কমে এসেছে। তবে সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে এখনো মাদক পাচারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চলমান আইনি প্রক্রিয়া
হাতীবান্ধা থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, আটক নারীদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা মাদক পরিবহনের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তাদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত অন্যান্যদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, জব্দকৃত ফেন্সিডিলের বিষয়ে আদালতে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হবে। আটক নারীদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হতে পারে। তদন্ত শেষ হলে মামলার পরবর্তী ধাপ এগিয়ে নেওয়া হবে।
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগ
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন ও পুলিশ একসাথে মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে মাদক প্রতিরোধে যৌথ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি
অভিযানে দুই নারী গ্রেফতার এবং ৪৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার হওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলায় আলোচনা শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকলে এলাকায় মাদক ব্যবসা অনেকাংশে কমে আসবে।