ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
লালমনিরহাট জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ পৃথক পৃথক স্থানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদকদ্রব্যসহ তিনজনকে আটক করেছে। অভিযানে মোট ১০২ বোতল নিষিদ্ধ ESKuf কফ সিরাপ এবং প্রায় ২ কেজি ৩০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, লালমনিরহাট জেলা পুলিশ সুপার মোঃ তারিকুল ইসলাম এর সার্বিক নির্দেশনায় সম্প্রতি জেলার বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চালানো হয়। মাদকের বিরুদ্ধে চলমান এ অভিযানকে পুলিশ “জিরো টলারেন্স” নীতির অংশ হিসেবেই পরিচালনা করছে।
হাতীবান্ধায় ৫০ বোতল কফ সিরাপ উদ্ধার
প্রথম অভিযানটি পরিচালিত হয় ২২ আগস্ট ২০২৫ তারিখে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ কর্তৃক। ওই দিন ভোরে হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব সারডুবি এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়।
অভিযানে স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মাজেদুল ইসলাম (৩৯) এর বসতবাড়ির আঙ্গিনা থেকে দক্ষিণ পাশের দেয়ালের পাশে রাখা ৫০ বোতল নিষিদ্ধ কফ সিরাপ উদ্ধার করা হয়। এ সময় পুলিশ তাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
সদর থানার অভিযানে গাঁজা উদ্ধার
একই দিনে দ্বিতীয় অভিযানটি পরিচালিত হয় লালমনিরহাট সদর থানার পুলিশ। সদর উপজেলার বড়বাড়ি ইউনিয়নের সাদেকনগর মৌজার শিমুলতলা মোড় এলাকায় কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তল্লাশি চালানো হয়।
অভিযানে মোঃ আব্দুল মজিদ (২৮) নামের এক যুবককে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে প্রায় ৮০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায়ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রাজপুরে কফ সিরাপ ও গাঁজাসহ গ্রেপ্তার
এরপর ২৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে তৃতীয় অভিযান চালায় লালমনিরহাট সদর থানা পুলিশ। এ সময় রাজপুর ইউনিয়নের কিসামত চিনাতুলি গ্রামে ধৃত আসামী মোঃ বাবলু মিয়া (২৮) এর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
অভিযানে পুলিশ ৫২ বোতল কফ সিরাপ এবং প্রায় ১ কেজি ৫০০ গ্রাম গাঁজা উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকেই বাবলু মিয়াকে আটক করা হয়।
আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ
লালমনিরহাট জেলা পুলিশ জানিয়েছে, আটককৃত তিনজনের বিরুদ্ধে পৃথকভাবে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে তারা থানায় আটক অবস্থায় আছে এবং পরবর্তী আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
পুলিশের অবস্থান
পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে জেলা পুলিশের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। কেউ মাদক ব্যবসা বা ব্যবহার করলে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের পাশাপাশি জনগণকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়।
সামাজিক সচেতনতার আহ্বান
পুলিশ বলছে, মাদকের বিরুদ্ধে কেবল আইনি পদক্ষেপই যথেষ্ট নয়। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। এজন্য পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় সমাজপতিরা একসাথে কাজ করলে মাদক নির্মূল সহজ হবে। মাদকের তথ্য দিলে পুলিশ গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্যবস্থা নেবে বলেও জানানো হয়।
বিশ্লেষণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, মাদক শুধু ব্যবহারকারীর জীবনকে ধ্বংস করে না, এটি পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের জন্যও বড় হুমকি। কিশোর-যুব সমাজকে রক্ষা করতে হলে মাদক ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। লালমনিরহাট জেলায় পুলিশের সাম্প্রতিক অভিযানকে তারা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন।
শেষকথা
লালমনিরহাট জেলার বিভিন্ন স্থানে একযোগে পরিচালিত এই বিশেষ অভিযানে বিপুল পরিমাণ কফ সিরাপ ও গাঁজা উদ্ধার এবং তিনজন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য সাফল্য। এ ধরনের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকলে জেলার তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে অনেকাংশে রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে সচেতন মহলের বিশ্বাস।