ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যৌথ অভিযানে ফেনসিডিলবাহী একটি মোটরসাইকেল আটক করা হয়েছে। এ সময় দুই যুবককে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের কাছ থেকে ২৯ বোতল ফেনসিডিল জব্দ করা হয়। সোমবার (২৫ আগস্ট ২০২৫) দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বোদা হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বোদা ক্যাম্পের সদস্যরা এ অভিযান পরিচালনা করে।
অভিযান সূত্রে জানা যায়, ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল দল বোদা বাইপাস তিন রাস্তার মোড় এলাকায় সন্দেহভাজন একটি মোটরসাইকেল থামিয়ে তল্লাশি চালায়। মোটরসাইকেলে থাকা দুই যুবকের দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করলে ২৯ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। পরবর্তীতে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয় এবং মাদকবিরোধী আইনের আওতায় প্রাথমিক মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ঠাকুরগাঁও জেলার ভুল্লী থানার লাউথুতি এলাকার বাসিন্দা মোঃ সম্রাট ইসলাম (১৯) এবং মোঃ জনি ইসলাম (২৪)। পুলিশ জানায়, তারা দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করে আসছিল। তবে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বোদা উপজেলায় সাম্প্রতিক সময়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এই এলাকায় মাদক চোরাচালানের প্রবণতা তুলনামূলক বেশি। এর আগে বিভিন্ন সময়ে বোদা, দেবীগঞ্জ এবং আটোয়ারী উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ফেনসিডিল, ইয়াবা ও অন্যান্য মাদকদ্রব্যসহ একাধিক মাদক কারবারি ধরা পড়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে যৌথ অভিযান কার্যকর ভূমিকা রাখছে বলে এলাকাবাসী মত প্রকাশ করেছে।
বোদা হাইওয়ে থানার একজন কর্মকর্তা জানান, রাত্রিকালীন টহলের সময় সন্দেহজনক চলাফেরা করা যেকোনো যানবাহন ও ব্যক্তিকে তল্লাশি করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই অভিযান চালিয়ে সফলভাবে মাদক আটক করা সম্ভব হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সমাজ থেকে মাদক নির্মূলে পুলিশের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। পরিবার থেকে শুরু করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠনগুলো একযোগে কাজ করলে তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
অভিযানে অংশ নেওয়া সেনাবাহিনীর একজন সদস্য জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে তারা সর্বদা সচেষ্ট। পুলিশ ও সেনাবাহিনী একসঙ্গে কাজ করলে অপরাধ দমনে সাফল্য অর্জন সহজ হয়। মাদকবিরোধী এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
স্থানীয় জনসাধারণ এ অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষায় মাদক নির্মূল অত্যন্ত জরুরি। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতেও নিয়মিত অভিযান চালানো হবে এবং মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বাংলাদেশে ফেনসিডিল একটি নিষিদ্ধ কফ সিরাপ, যা মূলত ভারত থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে আনা হয়। এটি সেবনের ফলে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি হয় এবং আসক্তরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। তাই সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফেনসিডিলের পাশাপাশি ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও আইস নামক মাদকদ্রব্যও দেশে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ ধরনের সাফল্য কেবল একটি ঘটনা নয়; বরং বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে মাদকবিরোধী সংগ্রামের অংশ। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, শুধু অভিযান নয়, সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়াকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে। মাদকাসক্তদের চিকিৎসা ও সমাজে পুনঃস্থাপনের ব্যবস্থা করা না হলে সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
পঞ্চগড় জেলার সাধারণ মানুষ মনে করছেন, মাদকবিরোধী এ ধরনের অভিযান তরুণদের সুরক্ষায় আশার আলো জ্বালাবে। তারা চান, প্রশাসন শুধু মাদকবাহীকে নয়, মাদক চোরাচালানের মূল হোতাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসুক।
উল্লেখ্য, আটককৃতদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। মাদক দমন কার্যক্রমে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।