ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর থানার মানিকতলা, ফুলবাড়ীগেট এলাকায় বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে আকস্মিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা নামতেই এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় মুহূর্তের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকাজুড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা প্রথমে ধোঁয়া দেখে ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেন। তবে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকায় তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে হঠাৎ বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর সঙ্গে থাকা ওয়াইফাই ও ডিস লাইনের মজুদকৃত তারে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের লেলিহান শিখা মুহূর্তেই চারপাশকে ঢেকে ফেলে। স্থানীয়দের সহযোগিতায় খবর দেওয়া হয় দৌলতপুর ফায়ার সার্ভিসকে।
খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দৌলতপুর ফায়ার স্টেশনের দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলে রওনা হয়। ৩ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করে মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ৬টা ৪৫ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা শুরু করেন। প্রায় ১৫ মিনিটের প্রচেষ্টার পর সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে আগুন আংশিক নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর আরও কয়েক মিনিটের প্রচেষ্টায় ঠিক ৭টা ৫ মিনিটে পুরোপুরি নির্বাপণ সম্ভব হয়।
অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আসার পর পরিস্থিতি স্থিতিশীল হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো রাত ৭টা ২০ মিনিটে পুনরায় স্টেশনে ফিরে আসে। সৌভাগ্যবশত, এ ঘটনায় কোনো মানুষ হতাহত হননি। তবে অগ্নিকাণ্ডে ওয়াইফাই ও ডিস লাইনের সংরক্ষিত বেশ কিছু তার পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে এলাকায় সাময়িকভাবে ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি পরিষেবায় ব্যাঘাত ঘটে।
অগ্নিকাণ্ডের কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস প্রাথমিকভাবে জানায়, বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। বিদ্যুতের তারের ত্রুটির কারণে শর্ট সার্কিট হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এলাকায় তারের ঝুলন্ত অবস্থার কারণে সবসময় দুর্ঘটনার ঝুঁকি বিরাজ করছে। বিশেষ করে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে যোগাযোগ লাইন, ইন্টারনেট ও ক্যাবল লাইনের জটলা বারবার দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি করে।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা সময়মতো খবর পেয়েছি বলেই আগুন দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। কোনো প্রাণহানি ঘটেনি, এটিই বড় সান্ত্বনা।” তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধে বৈদ্যুতিক খুঁটির আশপাশে অপ্রয়োজনীয় তার অপসারণ এবং সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।”
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আতঙ্কিত এলাকাবাসী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তবে বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের দাবি, বিদ্যুৎ বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত নিয়মিতভাবে তারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ঘটনার দিন এলাকায় শত শত মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। অনেকেই মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেছেন। ফলে দ্রুত খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। অনেকে বলেন, যদি ফায়ার সার্ভিস সময়মতো না পৌঁছাত, তবে আশপাশের ঘরবাড়ি বা দোকানপাট বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শহরের ভেতরে বিদ্যুতের খুঁটি ও বিভিন্ন ধরনের যোগাযোগ তার একসঙ্গে ঝুলে থাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এসব ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয় প্রশাসন, বিদ্যুৎ বিভাগ ও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস বারবারই জনগণকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক সংযোগে ত্রুটি বা শর্ট সার্কিট দেখা দিলে দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করতে বলেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও আশা করছেন, এ ঘটনাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে এবং নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এই অগ্নিকাণ্ড কোনো প্রাণহানি ছাড়াই শেষ হওয়ায় এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। তবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত তারের কারণে অনেকের ইন্টারনেট ও ক্যাবল টিভি সংযোগ সাময়িকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকায় দৈনন্দিন কাজে বিঘ্ন ঘটেছে। এলাকাবাসী এখন দ্রুত পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার অপেক্ষায় আছেন।