ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
পাবনার কৃতি সন্তান এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌসের অকাল প্রয়াণে শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবার, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক মহলে। শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পরে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। মাত্র ৩১ বছর বয়সে প্রতিশ্রুতিশীল এই শিক্ষকের মৃত্যুতে শিক্ষাঙ্গনে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে।
একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়া পরিবার
জান্নাতুল ছিলেন পাবনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি রুমী খন্দকারের একমাত্র কন্যা। হঠাৎ এই মৃত্যুর সংবাদে শোকাহত হয়ে পড়েছেন মা-বাবা। পরিবারের ঘনিষ্ঠজনরা জানান, জান্নাতুলের মৃত্যুতে তারা একেবারেই ভেঙে পড়েছেন। সহকর্মী সাংবাদিক উৎপল মীর্জা বলেন, “রুমী ভাই ভীষণ কষ্টে আছেন। জান্নাতুল ছিলেন তাদের একমাত্র সন্তান। এই শোক কোনোভাবেই সহনীয় নয়।”
অসম্পূর্ণ থেকে গেল সংসার জীবনের স্বপ্ন
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ছয় মাস আগে জান্নাতুলের বিয়ে হয় তার সহপাঠীর সঙ্গে। কেবলমাত্র রেজিস্ট্রির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা হয়েছিল। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারি ধুমধাম করে আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। সবার সামনে হাসিমুখে সংসার জীবনে প্রবেশ করার সেই পরিকল্পনা অসম্পূর্ণ রয়ে গেল তার অকাল মৃত্যুতে।
শিক্ষাজীবনে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
ছোটবেলা থেকেই জান্নাতুল ছিলেন মেধাবী। ২০০৯ সালে পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং ২০১১ সালে পাবনা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ অর্জন করেন তিনি। পরবর্তীতে ২০১২ সালে ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পর্যায়ে কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে ২০২১ সালে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন একই বিভাগে।
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক রোখসানা খানম ডেইজি স্মৃতিচারণ করে বলেন, “জান্নাতুল ছিলেন শান্ত, ভদ্র ও অত্যন্ত মেধাবী শিক্ষার্থী। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত।”
মৃত্যুর ঘটনা
শুক্রবার সকালে জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনায় দায়িত্ব পালন করছিলেন জান্নাতুল। হঠাৎ সিনেট ভবনে অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে যান তিনি। দ্রুত সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
জানাজা ও দাফন সম্পন্ন
বাদ জুমা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে জান্নাতুলের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ নিজ জেলা পাবনায় আনা হয়। রাতেই বাদ এশা পাবনা শহরের কাচারিপাড়া মসজিদে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।
শোকবার্তা ও সমবেদনা
জান্নাতুলের মৃত্যুতে পাবনা প্রেস ক্লাব সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতার, সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম, সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমানসহ স্থানীয় সাংবাদিক ও সমাজের বিশিষ্টজনরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তারা শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
অকাল মৃত্যুতে অপূরণীয় ক্ষতি
মাত্র ৩১ বছর বয়সে সম্ভাবনাময় এক শিক্ষকের জীবনাবসান সবাইকে নাড়া দিয়েছে। তার কর্মদক্ষতা, মেধা ও নিষ্ঠা তাকে শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের মাঝে বিশেষভাবে প্রিয় করে তুলেছিল। জান্নাতুলের অকাল প্রয়াণে তার পরিবার, শিক্ষাঙ্গন ও সমাজ এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হলো।