লালমনিরহাট প্রতিনিধি| সোমবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫
শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছেন লালমনিরহাটের কৃতি সন্তান ফাইকা তাহজীবা। সহকারী জজ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতা পেশা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছেন তিনি। গত রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এই মেধাবী শিক্ষার্থী।
উচ্চশিক্ষায় অসাধারণ সাফল্য
ফাইকা তাহজীবা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ৪১তম ব্যাচের ছাত্রী ছিলেন। তিনি স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষাতেই প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করে নজর কাড়েন। স্নাতকে তার জিপিএ ছিল ৩.৮৩ এবং স্নাতকোত্তরে ৩.৮২। মেধা ও অধ্যবসায়ের কারণে অল্প বয়সেই তিনি শিক্ষাজগতে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছেন।
শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে উৎকর্ষ
শিক্ষাজীবনের শুরুতেই ফাইকা তাহজীবার প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায়। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল থেকে। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি এবং রাজশাহী কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন তিনি। শৈশবে তিনি পড়াশোনা করেছেন রাজশাহীর প্যারামাউন্ট কিন্ডারগার্টেন এবং জাপানের একটি প্রি-প্রাইমারি স্কুলে। শৈশবের এই বহুমাত্রিক শিক্ষাজীবন তার একাডেমিক সাফল্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
সহকারী জজ থেকে শিক্ষকতার সিদ্ধান্ত
বাংলাদেশের বিচার বিভাগে নিয়োগের জন্য অনুষ্ঠিত ১৭তম সহকারী জজ পরীক্ষায় ফাইকা তাহজীবা সারা দেশে সপ্তম স্থান অর্জন করেছিলেন। এটি ছিল তার কর্মজীবনে প্রবেশের একটি বড় সুযোগ। তবে তিনি দীর্ঘ চিন্তাভাবনা শেষে আদালতের কাঠগড়ার বদলে শ্রেণিকক্ষকে বেছে নিয়েছেন। তার মতে, শিক্ষকতা এমন একটি পেশা যা দিয়ে সমাজে জ্ঞানের আলো ছড়ানো যায় এবং তরুণ প্রজন্মকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেওয়া সম্ভব।
পারিবারিক পটভূমি ও প্রেরণা
ফাইকা তাহজীবার পরিবার শিক্ষাঙ্গনে সুপরিচিত। তার পিতা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ফখরুল ইসলাম এবং মা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ওয়ারদাতুল আকমাম। শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে বেড়ে ওঠার কারণে ছোটবেলা থেকেই তিনি পড়াশোনার প্রতি অনুরাগী ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি লালমনিরহাট সদর উপজেলার হিরামানিক গ্রামে। এই মাটির টান ও পারিবারিক শিক্ষাদীক্ষা তাকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
গর্বিত লালমনিরহাট
লালমনিরহাটের সন্তান ফাইকা তাহজীবার এই অর্জনে আনন্দিত হয়েছেন স্থানীয় মানুষজন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় লালমনিরহাট অ্যালামনাই এসোসিয়েশন, রাজশাহীস্থ রংপুর বিভাগীয় সমিতি এবং বৃহত্তর রংপুর সমিতি তাকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তাদের মতে, ফাইকার সাফল্য শুধু পরিবারের নয়, পুরো জেলার জন্যই গর্বের বিষয়।
শিক্ষার্থীদের জন্য অনুপ্রেরণা
ফাইকা তাহজীবার জীবনকাহিনি আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণা। তিনি দেখিয়েছেন যে কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে জীবনে সফল হওয়া সম্ভব। আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিচার বিভাগে উচ্চ র্যাঙ্ক অর্জন করা সত্ত্বেও শিক্ষকতার পথ বেছে নেওয়া তার সাহসী সিদ্ধান্ত। তিনি চান জ্ঞান দিয়ে সমাজের অগ্রগতিতে অবদান রাখতে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ভবিষ্যতে গবেষণা, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আইনের প্রয়োগ বিষয়ে সমাজে সচেতনতা তৈরির কাজ করতে চান ফাইকা তাহজীবা। তার আশা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগকে আরো সমৃদ্ধ করতে তিনি ভূমিকা রাখতে পারবেন।
তার এই পথচলা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনকে সমৃদ্ধ করবে। ফাইকার এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, স্বপ্ন থাকলে যে কোনো পথেই সমাজ ও দেশের কল্যাণে কাজ করা যায়।