নিজস্ব সংবাদদাতা, মাগুরা
মাগুরা সদর উপজেলার রামনগর এলাকায় ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন একজন ট্রাকচালক। বৃহস্পতিবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং ভোরে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের রামনগর হাইওয়ে থানার সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, মাগুরা সদর সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায় ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। খবর পেয়ে দুটি ইউনিট দ্রুত ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং মাত্র ৭ মিনিটের মধ্যে সেখানে পৌঁছে যায়। সকাল ৫টা ২০ মিনিটে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধার অভিযান শুরু হয় এবং প্রায় ২০ মিনিটের চেষ্টায় মৃত ব্যক্তিকে ট্রাকের ভেতর থেকে বের করা সম্ভব হয়। পরে সকাল ৬টার দিকে উদ্ধারকাজ শেষে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা স্টেশনে ফিরে আসেন।
দুর্ঘটনার বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, ট্রাকটি ঢাকাগামী ছিল। চালক হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন এবং মুহূর্তের মধ্যে মহাসড়কের পাশে একটি গাছে গিয়ে ধাক্কা দেন। এতে গাড়ির সামনের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে যায় এবং চালক ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
মাগুরা সদর ফায়ার সার্ভিসের কর্তব্যরত কর্মকর্তা জানান, তাদের উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। দুর্ঘটনার ফলে বড় ধরনের যানজট সৃষ্টি হয়নি। ট্রাকটি মহাসড়ক থেকে সরিয়ে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে যায়।
ঘটনায় কোনো যাত্রী আহত হননি বলে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা। নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে রামনগর হাইওয়ে থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসআই মোঃ রাজু আহমেদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর সময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। নিহত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করতে পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা চলছে।
এ দুর্ঘটনার কারণে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্থানীয়রা জানান, মহাসড়কটিতে ভারী যানবাহনের চাপ সবসময়ই থাকে। বিশেষ করে রাতের বেলায় দ্রুতগতির ট্রাক চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। তারা নিয়মিতভাবে হাইওয়ে পুলিশের টহল এবং সচেতনতা বাড়ানোর দাবি জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে প্রতিদিনই অসংখ্য সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এর অন্যতম কারণ হলো অতিরিক্ত গতি, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের অভাব এবং চালকের অসতর্কতা। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি আইন প্রয়োগ আরও কঠোর করা জরুরি।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন মানুষ মারা যান। শুধু মহাসড়কেই নয়, গ্রামীণ সড়কেও দুর্ঘটনার সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সড়ক পরিবহন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চালকদের প্রশিক্ষণ, মহাসড়কে পর্যাপ্ত সাইনবোর্ড এবং কঠোর নজরদারি অত্যন্ত জরুরি।
রামনগরের এই দুর্ঘটনা আবারও প্রমাণ করল, সামান্য অসতর্কতাও জীবন কেড়ে নিতে পারে। নিহত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত ও মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।