নিজস্ব প্রতিবেদক, ঠাকুরগাঁও। ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ঠাকুরগাঁও-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোঃ দবিরুল ইসলামের সম্পত্তি জব্দ এবং তার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এই নির্দেশ দেয়ার পেছনে মূল আবেদনকারী হিসেবে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ইং রবিবার বিকেলে ঠাকুরগাঁও বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে বিচারক মো. জামাল হোসেন এই নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত ঠাকুরগাঁও জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আজমির শরিফ মারজী নিশ্চিত করেছেন যে আদালত দবিরুল ইসলামের সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং ব্যাংক হিসাব তৎক্ষণাৎ অবরুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সম্পদের উৎস এবং আয়ের স্বচ্ছতার বিষয়ে অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগে বলা হয়, তাঁর আয়ের সঙ্গে মিল নেই এবং বিভিন্ন অনৈতিক উপায়ে সম্পদ অর্জন করা হয়েছে। এই অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুদক দীর্ঘ সময় ধরে তদন্ত চালিয়ে এসেছে। আদালতের এই নির্দেশকে সেই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফলাফল হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আদালতের এই নির্দেশ আলহাজ্ব মোঃ দবিরুল ইসলামের সম্পদ নিয়ন্ত্রণে এক কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে। এটি কেবল আইন অনুসরণের অংশ নয়, বরং দেশের নাগরিকদের মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
দুদক সূত্র আরও জানায়, সম্পত্তি ক্রোকের এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ভবিষ্যতে যে কোনো সম্পদের অবৈধ হস্তান্তর রোধ করা যাবে। এ নির্দেশ কার্যকর হওয়ার পর দবিরুল ইসলামের নামে থাকা সকল জমি, বাড়ি, ব্যাংক হিসাব এবং অন্যান্য সম্পত্তি আদালতের তত্ত্বাবধানে থাকবে। এছাড়া, কোনো আর্থিক লেনদেন করতে হলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন হবে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা ঠাকুরগাঁও-২ আসনে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সাবেক সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ফলে আগামী নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তার রাজনৈতিক অবস্থান প্রভাবিত হতে পারে। তারা মনে করছেন, এটি শুধু দুদকের কার্যক্রমেরই নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রেরণ করছে যে, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কেউ আইন থেকে উপরে নয়।
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় নাগরিকরা আদালতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এটি দেশের স্বচ্ছতার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিছু মানুষ বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ অন্য রাজনৈতিক নেতাদেরকেও সতর্ক করবে এবং সরকারি সম্পদ ব্যবহার করার ক্ষেত্রে নিয়মনিষ্ঠা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আদালতের নির্দেশ কার্যকর হওয়ায় ব্যাংকগুলো ইতিমধ্যেই সাবেক সংসদ সদস্যের হিসাবগুলো স্থগিত করেছে। এই প্রক্রিয়া চলমান থাকায় দবিরুল ইসলাম নিজে বা তার কোনো প্রতিনিধি কোনো আর্থিক লেনদেন করতে পারছেন না।
দুদক ও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, তারা এই নির্দেশনার সমস্ত দিক যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন। এছাড়া ভবিষ্যতে আদালতের সঙ্গে সমন্বয় করে সম্পত্তি ক্রোক প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
এর ফলে একটি স্পষ্ট বার্তা যাচাই করা যাচ্ছে যে, দুর্নীতি দমন কমিশন দেশের সকল স্তরে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে এবং সম্পদের উৎস এবং আইনগত স্বচ্ছতার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে।
এই ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং সরকারের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।