নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁও জেলায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে। জেলার স্থানীয় বাজার এলাকার দোকানদার মোঃ তালেব ইসলামের ছোট ছেলে আরাফাত আজ সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) ২০২৫ ইং আনুমানিক দুপুর ১টার দিকে ভুল্লি নদীতে গোসল করতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশু আরাফাতের অকাল মৃত্যুতে পরিবার, স্বজন, প্রতিবেশী ও এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আরাফাত দুপুরে পরিবারের কাউকে কিছু না জানিয়েই কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে নদীতে গোসল করতে যায়। নদীর পানি কিছুটা গভীর থাকায় সে দ্রুত তলিয়ে যায়। সঙ্গে থাকা বন্ধুরা প্রথমে তাকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে নদীতে নেমে অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাকে উদ্ধার করে। দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরাফাতকে মৃত ঘোষণা করেন।
মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। নিহত আরাফাতকে দেখতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ তালেব ইসলামের বাড়িতে ভিড় করেন। সবার চোখে-মুখে শোক ও অশ্রু। একজন সুস্থ, প্রাণবন্ত ও হাসিখুশি শিশু হঠাৎ করেই এভাবে না ফেরার দেশে চলে যাবে—এমন বাস্তবতা মেনে নিতে পারছেন না স্বজনরা।
পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আরাফাত ছিল পরিবারের ছোট ছেলে। সবার স্নেহ ও আদরের পাত্র ছিল সে। তার অকাল মৃত্যুতে পরিবারটি ভেঙে পড়েছে। নিহতের মা বারবার কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের পক্ষ থেকে শিশুটির আত্মার মাগফেরাত কামনা করে সবার কাছে দোয়া চাওয়া হয়েছে।
মানবিক দিক থেকে এমন দুর্ঘটনা এলাকাবাসীর হৃদয় বিদারক করে তুলেছে। অনেকেই মনে করছেন, শিশুদের নিরাপত্তার জন্য নদী বা পুকুরে গোসল করার আগে অভিভাবকদের সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ প্রায়ই দেশে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বা নদীর স্রোত প্রবল থাকলে শিশুদের জন্য ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
স্থানীয় অভিভাবকরা জানান, শিশুদের সুস্থ বিনোদনের পাশাপাশি সচেতনতার অভাবেই বেশিরভাগ সময় এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। এজন্য পরিবার ও সমাজের সবাইকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানান তারা। অনেকের মতে, শিশুদের নিরাপদে রাখার জন্য অভিভাবকদের সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
এলাকার প্রবীণরা বলেন, প্রতিটি প্রাণই অমূল্য, আর শিশুর মৃত্যুতো আরো বেশি কষ্টের। এমন মৃত্যু শুধুমাত্র পরিবারের নয়, বরং পুরো সমাজের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। তারা নিহত আরাফাতের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।
শিশু আরাফাতের মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে এখনো শোকের আবহ বিরাজ করছে। স্থানীয় মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজনের কথাও জানা গেছে। সকলেই মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছেন—তিনি যেন নিষ্পাপ শিশুটিকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন এবং পরিবারকে এই শোক সইবার শক্তি দেন।
সমাপ্তি মন্তব্য
নদী, পুকুর বা জলাশয়ে গোসলের সময় অভিভাবকদের সচেতন হওয়া এখন সময়ের দাবি। শিশুদের প্রতি আরও যত্নশীল না হলে এ ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটবে। সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এ ধরনের অকাল মৃত্যু রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।