গাজীপুর প্রতিনিধি: শনিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
গাজীপুরের টঙ্গীতে কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম (৩৭) মৃত্যুবরণ করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর সাহারা মার্কেটের একটি কেমিক্যাল কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে গিয়ে নাঈমসহ ফায়ার সার্ভিসের আরও কয়েকজন সদস্য গুরুতর দগ্ধ হন। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, তার শরীরের ৪২ শতাংশ অংশ দগ্ধ হয়েছিল। ঘটনার পর থেকে তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে গেছেন, তবে শেষ পর্যন্ত দেশের সেবায় নিজের জীবন উৎসর্গ করলেন।
একে একে নিভে গেলো তিন সহকর্মীর জীবন
টঙ্গীর ওই অগ্নিকাণ্ডে আহত চারজনের মধ্যে ইতিমধ্যে তিনজন ফায়ারফাইটার শহীদ হয়েছেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ফায়ারফাইটার শামীম আহমেদ ও ২৪ সেপ্টেম্বর ফায়ারফাইটার নুরুল হুদা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। আজ যোগ হলো ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের নাম। এ ঘটনায় আহত অন্য সদস্যরাও শঙ্কামুক্ত নন বলে জানা গেছে।
নাঈমের জন্ম ও শিক্ষাজীবন
খন্দকার জান্নাতুল নাঈম ১৯৮৮ সালের ২৪ আগস্ট শেরপুর জেলার নকলা উপজেলার গড়দুয়ারা ইউনিয়নের খন্দকার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি ২০০৪ সালে মোল্লার টেক উদয়ন বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। পরে ফুলপুর ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।
কর্মজীবনের শুরু থেকে আত্মত্যাগ
২০১৬ সালের ২৪ আগস্ট বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সে যোগদান করেন নাঈম। কর্মজীবনে তিনি স্টেশন অফিসার হিসেবে মানিকগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে দায়িত্ব পালন করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর হন এবং প্রথমে চট্টগ্রামে, সর্বশেষ টঙ্গী ফায়ার স্টেশনে কর্মরত ছিলেন। দায়িত্ব পালনের প্রতিটি মুহূর্তে তিনি সততা, সাহস ও পেশাদারিত্বের পরিচয় রেখেছেন।
ব্যক্তিজীবনে এক সন্তানের জনক
পারিবারিক জীবনে নাঈম বিবাহিত ছিলেন এবং এক সন্তানের জনক। তার পিতা খন্দকার মোজাম্মেল হক ও মাতা দেলোয়ারা বেগম। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য হিসেবে তিনি ছিলেন পরিবার ও সন্তানের ভরসার আশ্রয়। তার আকস্মিক মৃত্যুতে পরিবারে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া।
ফায়ার সার্ভিসের গৌরবময় আত্মত্যাগের মিছিল
দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নেন। এ পর্যন্ত দেশ সেবায় ৫১ জন বীর ফায়ারফাইটার দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। সর্বশেষ সেই আত্মত্যাগের মিছিলে যোগ হলো খন্দকার জান্নাতুল নাঈমের নাম। সহকর্মী ও স্বজনরা বলছেন, তার এ আত্মত্যাগ দেশের মানুষের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
রাষ্ট্র ও সমাজের কাছে অনুকরণীয় উদাহরণ
অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্যোগে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সবসময় সম্মুখসারিতে থেকে মানুষের জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকেন। জান্নাতুল নাঈমও ছিলেন তেমনই একজন বীর সেনানী, যিনি দায়িত্ব পালনে কখনও পিছপা হননি। তার সাহসিকতা ও আত্মত্যাগ আগামীর প্রজন্মকে অনুপ্রেরণা জোগাবে।