লালমনিরহাট প্রতিনিধি: ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের ভূমি অফিসে সাধারণ সেবাপ্রার্থীরা প্রতিদিনই নানা ধরনের ভোগান্তির মুখে পড়ছেন। অভিযোগ রয়েছে, অফিসের একজন পিয়ন নয়ন কুমার সেবা প্রদানের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে পুরো অফিসকে নিজের দখলে নিয়েছেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে গেলে নির্ধারিত ফি দিতে হয়, কিন্তু নয়ন কুমার সরকারি ফি’র বাইরে বিভিন্ন প্রকার অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ অনুযায়ী, নামজারি, খাজনা-খারিজ, অনলাইন আবেদন, পর্চা উত্তোলনসহ ভূমি সংক্রান্ত অন্যান্য সেবা পেতে হলে শুধুমাত্র নির্ধারিত ফি দিয়ে কাজ হয় না। অনেক সময় অফিসে বসে নয়ন কুমার সেবাপ্রার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন ফি’র বাইরে হাজার হাজার টাকা আদায় করেন। সাধারণত একজন পিয়নের দায়িত্ব থাকে অফিসের ফাইলপত্রের আদান-প্রদান, নথি সংরক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং চা-পানির ব্যবস্থা করা। কিন্তু নয়ন কুমার এই দায়িত্ব ছাড়িয়ে নিজে মূল সেবার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন এবং অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন।
একজন ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার জমি খারিজ করার নামে নয়ন কুমার আমার কাছ থেকে আট হাজার টাকা নিয়েছেন। বাধ্য হয়েই টাকা দিতে হয়েছে, নাহলে সেবা হয়নি।”
অভিযোগ আছে, নয়ন কুমার শুধু ভূমি সেবাই নিয়ন্ত্রণ করেন না, তিনি ভূমি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও সমঝোতা করে থাকেন। যে কর্মকর্তা-ই এখানে পদায়িত হন না কেন, নয়ন কুমারের প্রভাবের বাইরে থাকে না। অফিসে ডিসিআর বাবদ নেওয়া নির্ধারিত ফি ১১০০ টাকা হলেও তিনি ১৫০০ টাকা দাবি করেন, বাকি টাকা নিজেই রাখেন যাতায়াত ও অন্যান্য খরচের নামে।
নয়ন কুমারের বিলাসবহুল জীবনধারার বিষয়টিও স্থানীয়দের প্রশ্নের মুখে। একজন সাধারণ অফিস পিয়ন হওয়ার পরও তার ব্যক্তিগত প্রাইভেট কার রয়েছে এবং রংপুর শহরে আলিশান বাড়িতে থাকেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নয়ন কুমার দাবি করেছেন, গাড়িটি তার শ্বশুর উপহার দিয়েছেন। তবে স্থানীয়রা বলছেন, ঘুষ বাণিজ্য ও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের মাধ্যমে তিনি এই সম্পদ অর্জন করেছেন।
ভূমি সেবা পেতে আসা কৃষক ও সাধারণ মানুষরা জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সেবা না পেয়ে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এই সমস্যার কারণে তাদের জমি সংক্রান্ত কাজে বাধা পড়ছে এবং অনেকের অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে।
স্থানীয়দের মতে, এটি শুধু কাকিনা ভূমি অফিসের ঘটনা নয়। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ভূমি অফিসেও একই ধরনের অনিয়ম দেখা যায়। পিয়ন ও অতিরিক্ত কর্মীরা প্রভাব বিস্তার করে অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করছেন, ফলে প্রকৃত সেবা না পেয়ে মানুষ পড়ছেন ভোগান্তিতে।
কালীগঞ্জ উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এসিল্যান্ড মেহেদী ইমাম জানান, “এ ধরনের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তদন্তের মাধ্যমে সত্যতা পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সচেতন মহল মনে করছেন, একটি ভূমি অফিসে একজন পিয়নের দাপটে সাধারণ মানুষকে সেবা নিতে হয় এমন পরিস্থিতি প্রশাসনের জন্যও লজ্জাজনক। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে এ ধরনের ঘটনা কমবে।
এ বিষয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সত্যতা যাচাই করার জন্য প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে।