
নিজস্ব প্রতিবেদক, গাইবান্ধা:
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অসুস্থ একটি গরু জবাই করার পর অন্তত ১১ জন মানুষ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে, বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দিবাকর বসাক শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, আক্রান্তদের মধ্যে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ অ্যানথ্রাক্স রোগ মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায় না। এটি মূলত অসুস্থ গবাদিপশু জবাই বা মাংস ব্যবহারের মাধ্যমে ছড়ায়। নিয়মিত চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় ওষুধ সেবনে আক্রান্তরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পারবেন।
কিভাবে ঘটলো এ ঘটনা?
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গেল শনিবার উপজেলার বেলকার কিশামত সদর গ্রামে মাহাবুর রহমানের একটি গরু হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে সেটি জবাই করা হয় এবং মাংস ভাগাভাগি করা হয়। এ সময় গ্রামের কয়েকজন ব্যক্তি সরাসরি গরু কাটাকাটির কাজে অংশ নেন। জবাইয়ের কয়েকদিন পর ওই ১১ জনের শরীরে অ্যানথ্রাক্সের উপসর্গ দেখা দেয়।
প্রথমদিকে তাদের হাতে ফোসকা, ঘা ও ক্ষত তৈরি হয়। ধীরে ধীরে আক্রান্তদের মুখ, চোখ ও নাকে ক্ষতের দাগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে গেলে জানা যায়, তারা অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছেন।
হাসপাতালে ভর্তি ও আক্রান্তদের পরিচয়
আক্রান্তদের মধ্যে মোজা মিয়া, মোজাফফর মিয়া, শফিকুল ইসলাম ও মাহাবুর রহমানসহ মোট পাঁচজন বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বাকিরা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আক্রান্তদের শারীরিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আছে এবং সঠিক চিকিৎসা চললে তারা সুস্থ হয়ে উঠবেন।
চিকিৎসকদের পরামর্শ
ডা. দিবাকর বসাক বলেন, “অ্যানথ্রাক্স কোনো ভয়াবহ সংক্রামক রোগ নয়। এটি কেবল অসুস্থ পশু জবাইয়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। সঠিকভাবে চিকিৎসা নিলে কয়েকদিনের মধ্যেই রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠে।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন, “ভবিষ্যতে অসুস্থ পশু জবাই থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্তরা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।”
স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মন্তব্য
বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাফিজার রহমান বলেন, “আমরা বারবার সাবধান করলেও কয়েকজন গ্রামবাসী অসুস্থ গরুটি জবাই করেন। যারা গরু কাটাকাটির কাজে সরাসরি যুক্ত ছিলেন তারাই আক্রান্ত হয়েছেন।”
তিনি আরও বলেন, “এখন গ্রামবাসী গবাদিপশু জবাই নিয়ে আতঙ্কে আছেন। তবে আমরা সবাইকে সচেতন করার চেষ্টা চালাচ্ছি।”
জনমনে আতঙ্ক ও সচেতনতার দাবি
এই ঘটনার পর সুন্দরগঞ্জের গ্রামাঞ্চলে গবাদিপশু জবাই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে সরকারি পর্যায়ে আরও সচেতনতা তৈরি করা জরুরি। বিশেষ করে গ্রামের সাধারণ মানুষ যাতে অসুস্থ গরু বা ছাগল জবাই না করেন, সে বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে।
সচেতন নাগরিকরা বলছেন, অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিভাগকে শুধু শহরেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। তারা দাবি করেছেন, স্কুল-কলেজ ও স্থানীয় বাজারগুলোতে মাইকিংয়ের মাধ্যমে মানুষকে জানাতে হবে যে, অসুস্থ গবাদিপশু জবাই করা কতটা ক্ষতিকর হতে পারে।
অ্যানথ্রাক্স রোগ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত তথ্য
বিশেষজ্ঞরা জানান, অ্যানথ্রাক্স একটি ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ, যা মূলত পশুর শরীরে বেশি দেখা যায়। অসুস্থ পশু জবাই করা, মাংস কাটা কিংবা সঠিকভাবে রান্না না করে খেলে মানুষের শরীরে এ রোগ ছড়িয়ে যেতে পারে। রোগের সাধারণ উপসর্গ হলো ত্বকে ফোসকা, ঘা, চুলকানি এবং ক্ষত তৈরি হওয়া। সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে এটি প্রাণঘাতী নয়।
শেষকথা
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ঘটনার পর স্থানীয়রা আতঙ্কে থাকলেও চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সঠিক চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে অ্যানথ্রাক্স থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। তাই অসুস্থ পশু জবাই থেকে বিরত থাকা এবং সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করাই এ মুহূর্তে প্রধান করণীয়।