লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় হৃদয়বিদারক এক ঘটনা ঘটেছে। পারিবারিক কলহের জেরে নিমাই কর্মকার (২৮) নামের এক ছেলে নিজের মা সুশীলা কর্মকারকে (৫৫) ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত ১টার দিকে উপজেলার বড়বাড়ী ইউনিয়নের শিবরাম মৌজার পালপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত সুশীলা কর্মকার ওই এলাকার মৃত ভেললো কর্মকারের স্ত্রী। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকেই অভিযুক্ত ছেলে নিমাই কর্মকারকে আটক করেছে এবং তাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কিছুদিন আগে নিমাই কর্মকারের স্ত্রী অভিমান করে বাবার বাড়িতে চলে যান। এ ঘটনা নিয়ে পরিবারে নানান উত্তেজনা চলছিল। শনিবার রাতে বিষয়টি নিয়ে মা-ছেলের মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাধে। এরই এক পর্যায়ে নিমাই ঘর থেকে বেরিয়ে বড়বাড়ী বাজারে যায় এবং সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে কথাকাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে নিমাই ধারালো ছুরি দিয়ে দু-একজনকে আঘাত করে।
এরপর ঘটনাস্থল থেকে ফিরে সে নিজের বাড়িতে আসে। তখন মা সুশীলা কর্মকার ছেলেকে শান্ত করার চেষ্টা করলে নিমাই আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ছুরি দিয়ে একাধিকবার আঘাত করে। গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয়রা সুশীলাকে উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এ সময় তার আরেক ছেলে কানাই কর্মকারও ছুরিকাঘাতে আহত হন। বর্তমানে তিনি স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
স্থানীয়রা জানান, নিমাই কর্মকার দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। কয়েক মাস আগে তার চিকিৎসার জন্য পরিবার তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে নিয়েও গিয়েছিল। তবে চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই সে বাড়ি ফিরে আসে। সম্প্রতি তার আচরণ আরও অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে আদিতমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি তদন্ত) বাদল কুমার রায় জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে অভিযুক্ত নিমাই কর্মকারকে আটক করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার দায় স্বীকার করেছে বলে জানা গেছে।
ওসি আরও বলেন, “প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে পারিবারিক কলহ ও মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে এ মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”
এই ঘটনার পর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রতিবেশীরা জানান, সুশীলা কর্মকার ছিলেন শান্ত স্বভাবের ও ধর্মপ্রাণ নারী। সন্তানদের নিয়ে কষ্ট করে সংসার চালাতেন। অথচ সেই সন্তানের হাতেই আজ তার জীবন থেমে গেলো।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও মানবাধিকারকর্মীরা এ ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, মানসিক সমস্যায় ভুগছে এমন পরিবারের সদস্যদের বিষয়ে সচেতন হওয়া ও সময়মতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা জরুরি, যাতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানো যায়।
এই মর্মান্তিক ঘটনাটি আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছে—পারিবারিক সম্পর্ক ও মানসিক স্বাস্থ্যের যত্নে অবহেলা কতটা ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।