লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় ভয়াবহ এক ঘূর্ণিঝড়ে শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলার শ্রুতিধর গ্রাম এবং ভোটমারী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় রবিবার (৫ অক্টোবর) ২০২৫ ইং সকাল ৯টা ৩০ মিনিটের দিকে আকস্মিকভাবে প্রবলবেগে ঘূর্ণিঝড়টি বয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে এলাকার ঘরবাড়ি, গাছপালা ও ফসলের মাঠ লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়ে।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া ঝড়ে বহু ঘরবাড়ির চাল উড়ে যায়, টিনের ছাউনি ছিটকে পড়ে দূর-দূরান্তে। কিছু বাড়ি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে বেশ কিছু পরিবার নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
শ্রুতিধর গ্রামের বাসিন্দা হারুন মিয়া বলেন, "হঠাৎ করে আকাশ অন্ধকার হয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যে এমন বাতাস বইতে থাকে যে, আমার ঘরের টিন উড়ে গিয়ে পাশের জমিতে পড়ে। এখন পরিবারের সবাই খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছি।"
আরেক বাসিন্দা রোকেয়া বেগম বলেন, "আমাদের ছোট্ট ঘরটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। শিশু সন্তানদের নিয়ে খুব কষ্টে আছি। সরকার যদি একটু সহায়তা করত, আবার ঘর তুলতে পারতাম।"
ঘূর্ণিঝড়ে শুধুমাত্র ঘরবাড়ি নয়, কৃষিজমিতেও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এলাকায় ভুট্টা, ধান ও শাকসবজির ক্ষেতগুলো মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। ফলে কৃষকরা এখন দ্বিগুণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন—একদিকে ঘরের ক্ষতি, অন্যদিকে ফসলের ক্ষতি।
ভোটমারী ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, "এলাকার অন্তত কয়েকশ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেউ কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। আমরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত ত্রাণ সহায়তার আবেদন জানিয়েছি।"
ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত সরকারি কোনো ত্রাণ বা সাহায্য তাদের কাছে পৌঁছায়নি। জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে জরুরি সহযোগিতা না পেলে এই পরিবারগুলো চরম দুর্ভোগে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনগুলো এলাকাবাসীর পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। কিছু যুবক নিজের উদ্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য খাবার ও পানির ব্যবস্থা করেছেন।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি। ফলে তার মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অফিস সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিকভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে। তালিকা প্রস্তুত শেষে দ্রুত ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।
প্রাকৃতিক এই দুর্যোগে সাধারণ মানুষ এখন হতভম্ব ও উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে শীতের আগমুহূর্তে ঘরবাড়ি হারানো পরিবারগুলোর সামনে অনিশ্চিত দিন অপেক্ষা করছে। তাদের মধ্যে অনেকে ইতোমধ্যে স্থানীয় বিদ্যালয়, মসজিদ এবং আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেড়ে যাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের মানুষ বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণের সংখ্যা বাড়ালে এমন দুর্ভোগ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
লালমনিরহাটের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর এখন একটাই দাবি—“তাদের ঘরে ফেরার পথ যেন খুলে দেওয়া হয়।” সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপই পারে এই অসহায় পরিবারগুলোর জীবনে আবার আলো ফিরিয়ে আনতে।