
ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
লালমনিরহাট জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে অবস্থান করছে। পানি কিছুটা কমলেও এখনো বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
রোববার রাতে তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপৎসীমার ৫২ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত উঠে যায়, যা বিপৎসীমার প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। পানির চাপ কমাতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়। তবুও ব্যারাজের বাম তীরঘেঁষা ফ্লাটবাইবাস সড়কের ওপর দিয়েও সারারাত পানি প্রবাহিত হয়, ফলে নতুন করে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়ে।
নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ, চরম দুর্ভোগ
দীর্ঘ সময় ধরে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত থাকায় হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার একাধিক ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুরনা, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ও রাজপুর ইউনিয়নের বহু গ্রামের নিম্নাঞ্চল এখনো প্লাবিত।
গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক, সবজি ক্ষেত, রোপা আমন ও পাট ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়ায় সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গবাদিপশু নিয়ে বহু মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বাঁধ, স্কুল ভবন ও উঁচু স্থানে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও প্রশাসনের তৎপরতা
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, পানি বৃদ্ধির কারণে যাতে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ না করে, সে জন্য গঠিত টিম সার্বক্ষণিক নজরদারিতে আছে। পানি কমে যাওয়ার পরও যদি কোথাও ভাঙন দেখা দেয়, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত জিও ব্যাগ মজুদ রয়েছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক এইচ এম রকি হায়দার বলেন, প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ কার্যক্রম ও মানুষের খোঁজখবর নিতে পাঁচ উপজেলার নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় নির্দেশনা
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, আগামী দুই দিনের মধ্যে তিস্তার পানি ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে আপাতত বিপৎসীমার ওপরে থাকায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত মানুষকে জরুরি খাবার, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে। এছাড়া, কেউ বিপদে পড়লে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
শেষকথা
তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় লালমনিরহাটের মানুষকে আবারও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। প্রশাসনের উদ্যোগে উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চললেও এখন প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা— যাতে তিস্তা তীরবর্তী এলাকাগুলোতে স্থায়ীভাবে ভাঙনরোধ ও বন্যা মোকাবিলার ব্যবস্থা নেওয়া যায়।