নিজস্ব প্রতিবেদক, আশুলিয়া, ঢাকা: ৭ অক্টোবর ২০২৫
ঢাকার সাভারের আশুলিয়ায় পলমল গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ইং সোমবার বেলা ১২টার দিকে জামগড়া এলাকার ‘আয়েশা গার্মেন্টস’ নামের কারখানাটিতে আগুন লাগে। এ সময় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ছড়িয়ে পড়ে ভবনের ভেতর। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
জিরাবো মডার্ন ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ফাইটার মো. সবুজ ইসলাম জানান, দুপুর পর্যন্ত আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। ভবনের ভেতর এখনো ধোঁয়া ও আগুনের তাপ রয়েছে, যার কারণে ভেতরে প্রবেশে বিপদ রয়েছে। তিনি বলেন, “বাইরে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভেতরে আগুন জ্বলছে। ধোঁয়ার ঘন স্তর ভেতরে প্রবেশে বাধা দিচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হঠাৎ করে কারখানার ভিতর থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখেন তারা। মুহূর্তেই আগুন উপরের তলায় ছড়িয়ে পড়ে। কর্মরত শ্রমিকরা আতঙ্কে ভবন থেকে বের হয়ে আসেন। অনেকেই ব্যক্তিগত সামগ্রী ও কাঁচামাল বাঁচানোর চেষ্টা করলেও আগুনের তীব্রতায় কেউ কাছে যেতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। আগুনের কারণে আশপাশে বিপুলসংখ্যক মানুষের ভিড় জমে যায়, ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পুলিশকে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা যায়।
প্রাথমিকভাবে অগ্নিকাণ্ডের কারণ নিশ্চিত করা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, কারখানার বৈদ্যুতিক সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। পরে বিস্তারিত তদন্তে প্রকৃত কারণ জানা যাবে বলে জানান তারা।
আয়েশা গার্মেন্টস পলমল গ্রুপের একটি পোশাক উৎপাদনকারী কারখানা। সেখানে প্রতিদিন শতাধিক শ্রমিক কাজ করেন। আগুন লাগার সময় কারখানার একটি অংশে কর্মীরা কাজ করছিলেন। দ্রুত সবাইকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হওয়ায় বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানান, আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় প্রশাসন পাশে থাকবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
আগুনে কারখানার উৎপাদন ইউনিট, গুদামঘর ও কিছু প্রস্তুত পোশাক পুড়ে গেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসার পর ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যাবে।
অন্যদিকে, স্থানীয়দের দাবি—এলাকাটিতে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকায় প্রায়ই এমন দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। তারা দ্রুত শিল্প এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি জানান।
সন্ধ্যার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতি এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে ভেতরে জ্বলতে থাকা কাপড় ও প্লাস্টিকের কারণে ধোঁয়ার সমস্যা এখনো রয়ে গেছে।
অগ্নিকাণ্ডে কেউ হতাহত না হলেও কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ অব্যাহত রয়েছে, আর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সারারাত সেখানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন বলে জানিয়েছেন।