ক্রাইম এডিশন, ডেস্ক রিপোর্ট
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদারে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে স্বাক্ষরিত হয়েছে সমঝোতা স্মারক (MOU)। ১৩ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন দুই প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিবৃন্দ।
সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অন-সাইট ফায়ার স্টেশনের কার্যকারিতা ও অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অস্থায়ীভাবে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স (এফএসসিডি)-এর সদস্যদের মোতায়েনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে পারমাণবিক স্থাপনায় যেকোনো জরুরি পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদান ও অগ্নি নিয়ন্ত্রণ সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল, এনডিসি, এএফডব্লিউসি, পিএসসি, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রকল্প পরিচালক এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লে. কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী, এসজিপি, পিএসসি। অন্যদিকে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)-এর পক্ষে স্বাক্ষর করেন ডেপুটি চিফ সুপারিনটেনডেন্ট এস. এম. মাহমুদ আরাফাত।
এই চুক্তির মাধ্যমে রূপপুর প্রকল্প এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অস্থায়ীভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তারা শুধু অগ্নি নির্বাপণ নয়, বরং দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রমেও সহায়তা করবেন। এর ফলে প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে বলেন, “রূপপুর প্রকল্প বাংলাদেশের জাতীয় গর্বের প্রতীক। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। ফায়ার সার্ভিসের এই সহযোগিতা প্রকল্পের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করবে।”
অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল বলেন, “আমরা দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সর্বদা কাজ করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় দায়িত্ব পালন করা আমাদের জন্য গৌরবের।”
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, যা বাস্তবায়ন করছে নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (এনপিসিবিএল)। প্রকল্পটি দেশের জ্বালানি খাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এই ধরনের স্থাপনায় অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা একটি অপরিহার্য অংশ, কারণ সামান্যতম ত্রুটিও বড় ধরনের বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা আরও মনে করেন, এই সমঝোতা স্মারক বাংলাদেশে পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করার পথে একটি বড় অগ্রগতি। ফায়ার সার্ভিসের অস্থায়ী মোতায়েনের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সেখানে স্থায়ী ফায়ার স্টেশন গড়ে তোলার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে।
এনপিসিবিএল সূত্রে জানা গেছে, রূপপুর প্রকল্প এলাকায় স্থায়ী ফায়ার ইউনিট গঠনের প্রস্তুতি চলছে। এ জন্য আন্তর্জাতিক মানের অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম, প্রশিক্ষিত জনবল এবং আধুনিক প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর জানিয়েছে, তাদের সদস্যরা প্রকল্প এলাকায় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণকেও অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন। এতে স্থানীয় সচেতনতা বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
সরকারি সূত্রে আরও জানা যায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিসের এই যৌথ উদ্যোগ ভবিষ্যতে দেশের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চলেও বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে।
দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় এই সমঝোতা স্মারক একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নয়, বরং উন্নত প্রযুক্তি ও নিরাপত্তা সংস্কৃতির দিক থেকেও বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নেবে এমনটাই আশা সংশ্লিষ্ট মহলের।
সূত্র: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।