শরিফুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি: ক্রাইম এডিশন
‘ঢাকায় থেকে যাবো, প্রয়োজনে জীবন দেবো’—এমন স্লোগানে মুখর কিশোরগঞ্জ শহর। ময়মনসিংহ বিভাগের সঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলাকে যুক্ত করার প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছে জেলার সাধারণ মানুষ। রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত গুরুদয়াল সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা জানায়—কিশোরগঞ্জ ঢাকারই অংশ থাকবে, প্রয়োজনে জীবন দিয়েও এই পরিচয় বদলাতে দেবে না।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও সাধারণ নাগরিকরা একসঙ্গে অংশ নেন। শহীদ মিনারের সামনে প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে লেখা ছিল—
“জীবন থাকতে ময়মনসিংহ বিভাগে যাব না”,
“ঢাকা আছে, ঢাকা থাকবো”,
“কিশোরগঞ্জ ঢাকাতেই গর্বিত”,
“অবৈধ সিদ্ধান্ত মানি না, মানবো না”।
এই সব পোস্টার ও ব্যানার হাতে নিয়ে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিতে থাকেন—“ঢাকা ঢাকা—আমাদের দাবি একটাই!”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কর্মসূচির শুরু থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ দলে দলে সেখানে যোগ দেয়। গুরুদয়াল কলেজ প্রাঙ্গণ এবং আশপাশের এলাকা মুহূর্তেই স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলার মানুষ ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিভাগের অংশ। প্রশাসনিক সুবিধা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক—সব দিক থেকেই কিশোরগঞ্জ ঢাকার সঙ্গে যুক্ত। তাই হঠাৎ করে ময়মনসিংহ বিভাগে স্থানান্তরের প্রস্তাব জনগণের ইচ্ছার পরিপন্থী।
বক্তারা অভিযোগ করেন, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবটি ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ এবং এটি জেলা বিভাজনের নামে জনমতের সঙ্গে ছলনা। তারা বলেন, “কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহে নেয়ার পরিকল্পনা বাতিল না করলে তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন বড়বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলু, জেলা যুবদলের সভাপতি খসরুজ্জামান জিএস শরীফ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব শহীদুল্লাহ কায়সার শহীদ, সাবেক ছাত্রনেতা মারুফ মিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সদস্য সচিব ফয়সাল প্রিন্স, সংগঠক আশরাফ আলী সোহান, রাফিউল ইসলাম নওশাদ, জাকির হোসেন রাজীব, জগলুল হাসান চয়ন, গুরুদয়াল কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম জেনি, এমদাদুল হক নাঈম, শেখ মুদ্দাছির তুসি ও কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি নুসরাত জাহান প্রমুখ।
বক্তারা আরও বলেন, “জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। কিশোরগঞ্জবাসী শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি জানাচ্ছে, কিন্তু প্রয়োজনে তারা রাজপথে নেমে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবে।”
একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা জন্মেছি ঢাকার অংশ হিসেবে। ময়মনসিংহে স্থানান্তর মানে আমাদের পরিচয় হারানো। জীবন থাকতে আমরা এই সিদ্ধান্ত মানবো না।”
কর্মসূচির শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। আন্দোলনকারীরা সেখানে অবস্থান নিয়ে আবারও এককথায় দাবি তোলে—“ঢাকাতেই থাকবো, জীবন দিয়েও থাকবো।”
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা গেছে, এই কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন যে, দাবি পূরণ না হলে পরবর্তী ধাপে তারা জেলা প্রশাসন ঘেরাওসহ বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন।
বক্তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, “জনগণের ভালোবাসা, ইতিহাস ও আবেগের প্রতি সম্মান দেখিয়ে কিশোরগঞ্জকে তার বর্তমান প্রশাসনিক অবস্থানে রাখা হোক।” তারা সতর্ক করে বলেন, এই সিদ্ধান্তে যদি জনগণের কণ্ঠ উপেক্ষিত হয়, তাহলে সারা বাংলাদেশে কিশোরগঞ্জবাসীর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়বে।
পুরো শহর জুড়ে তখন একটাই স্লোগান—
“ঢাকায় থেকে যাবো, প্রয়োজনে জীবন দেবো”,
“জীবন থাকতে ময়মনসিংহে যাব না”,
“ঢাকা আছে, ঢাকা থাকবো”—
এ যেন কিশোরগঞ্জবাসীর এক হৃদয়ের অঙ্গীকার।